নির্বাচনের বাকি মাত্র ২৬ দিন, কঠোর ইসি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৬ দিন বাকি। এবারের নির্বাচন কেমন হয় তা দেখতে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের তীক্ষন দৃষ্টি রয়েছে। সবাই চায় নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হোক। তাই কোনোভাবেই যেন এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য সরকারের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) এ বিষয়ে অধিকতর তৎপর। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে কঠোর নজরদারি রয়েছে। নির্বাচনের পাঁচদিন আগেই সব ভোটকেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা। সুষ্ঠু নির্বাচন করাই সবার লক্ষ্য।
ইসি সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে করতে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের কঠোর নজরদারি রয়েছে। এবার শতাধিক বিদেশী পর্যবেক্ষক আসছে সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে। সাংবিধানিক শপথ রক্ষায় নির্বাচন কমিশনেরও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যা কিছু দরকার সবই করছে ইসি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ইতোমধ্যেই কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে যে কোনো মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ইসিকে সার্বিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে বেশকিছু বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে ইসি। এর মধ্যে রয়েছে সকল প্রার্থীর জন্য লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা ও আচরণবিধির যথাযথ প্রয়োগ। ইতোমধ্যেই বেশ ক’জন প্রভাবশালী প্রার্থীকে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে কারণ দর্শাও নোটিস দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া গেছে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনীর সাড়ে সাত লাখ সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকছে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার আনসার। থাকছে দুই হাজার ৩৫০ জন কোস্ট গার্ড ও ৪৬ হাজার ৮৭৬ বিজিবি। যারা ভোটের ১০ দিন আগে থেকে নেমে ১৩ দিন মাঠে থাকবে। এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকছে যারা ভোটের পাঁচদিন আগে মাঠে নামবে। এর বাইরে সেনাবাহিনীও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়।
ইসির পক্ষ থেকে এবার ভোটকেন্দ্রে সকল প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করা, ভোটগ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আচরণবিধি মানাতে ৮০২ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়, তারা ২৮ নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করেছেন। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩০০ আসনের জন্য ৩০০টি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট আসনে প্রার্থীদের অপরাধ তদন্ত করে আমলে নেওয়ার জন্য এসব কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত এ কমিটি দায়িত্ব পালন করবে। এই কমিটিতে থাকছেন যুগ্ম জেলা জজ, প্রয়োজনে সিনিয়র সহকারী জজ।
এবার যারা ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এমন পদক্ষেপ দেখে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ ক’টি দেশ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক আসবেন বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ঢাকায় নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা এক সময় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করে। তারা নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় গিয়ে সংসদ নির্বাচনের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাওয়ার পাশাপাশি কীভাবে এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে। এ ছাড়া তারা দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একে একে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ঢাকায় এসে কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়ে তৎপরতা বৃদ্ধি করে।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও বেশ ক’টি দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা রাজপথের বিরোধী দলের সঙ্গে যখনই বৈঠক করেছেন তখনই তারা দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই এবং তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করে। কিন্তু বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকরা যখনই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, সরকারের মন্ত্রী বা সচিব এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন তখনই তাদের জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখে বিদেশী কূটনীতিকরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ কারণে তাদের তৎপরতা কমে গেছে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে নির্বাচনমুখী দলগুলোর কর্মতৎপরতা ক্রমেই বাড়ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও এ বিষয়টি মাথায় রেখে নিজেদের পক্ষে ভোট আদায়ের কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে কোনো কোনো সংসদীয় এলাকায় শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় সহিংসতার আশঙ্কায় ওই এলাকাগুলোর দিকে বিশেষ নজরদারি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।