নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রশাসনের যত আয়োজন
চট্টগ্রাম: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামেও নির্বাচনে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে নগরের ১৬টি সংসদীয় আসনকে দুইভাগে ভাগ করেছে নির্বাচন কমিশন।
এজন্য দুইজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে ইসি। ১৬টি আসনের মধ্যে ৬টিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবং বাকি ১০টি আসনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। এছাড়াও চট্টগ্রামের ২ হাজার ২৩টি ভোটকেন্দ্রে ২৫ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধি তদারকির জন্য চট্টগ্রামে ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে জরিমানা ও সতর্ক করেছেন তারা। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৯৬ প্লাটুনের প্রায় ১ হাজার ৯২০ জন সদস্য, র্যাবের ৩২ প্লাটুনে প্রায় ৭৫০ জন, ৮ হাজার পুলিশ সদস্য, কোস্টগার্ডের ১৫০ জন, আনসার-ভিডিপির ২৪ হাজার ২৭৬ জন সদস্যসহ মোট ২ হাজার ২৩টি কেন্দ্রে সর্বমোট ৩৫ হাজার ৬৫৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও ৩ জানুয়ারি থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নামছে সেনাবাহিনীর ৫০০ সদস্য। এর বাইরে সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রধারীসহ ৩ জন পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্য থাকবেন।
এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রামে ১৬ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন। যেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন সিনিয়র সহকারী জজ এবং যুগ্ম জেলা জজের মত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ভোটের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে সর্বমোট ৭৯জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এছাড়াও ভোট সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের সুযোগ রেখেছে নির্বাচন কমিশন। সেইসঙ্গে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও খোলা হয়েছে। যেখানে অভিযোগ পেলে সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক ভোট বন্ধের কথাও জানিয়েছে ইসি। পাশাপাশি ২ ঘন্টা পরপর মোট ভোটগ্রহণ ও শতকরা চিত্রও সফটওয়্যারের মাধ্যমে জানাবে ইসি।
৩৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনে প্রতিনিয়ত পুলিশের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। ইতিমধ্যে ৭৬ জন প্রার্থীর সঙ্গে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮’ এর বিভিন্ন বিধি পালন নিয়ে মতবিনিময় করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. হাবিবুল আওয়াল ২৬ ডিসেম্বর প্রার্থীদের সঙ্গে আচরণ বিধিমালা নিয়ে মতবিনিময় ও শুনানি গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির ১৬ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে আচরণবিধি ভঙ্গ রোধে করণীয় রোধে মতবিনিময় করা হয়েছে। কোনও প্রার্থী কর্তৃক অন্য কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া অনেক অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়েও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে প্রতিদিন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে আসতে পারবে। আমরা তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। ভোটকেন্দ্র দখলকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। ভোট গ্রহণের উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতির রয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রাম ১, ২, ৩, ৬, ৭, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬- এ ১০টি আসনের মোট ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ১২৭টি, মোট বুথ রয়েছে ৭ হাজার ৬৩০টি, মোট ভোটার সংখ্যা ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭০৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৮ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ জন, মহিলা ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৯৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ১০ জন ভোটার রয়েছে। ইতিমধ্যে ৭৬ জন বৈধ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৩ জন রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোট গ্রহণ সংক্রান্ত মালামাল সকল উপজেলা সদর দফতরে যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ব্যালট পেপার গ্রহণ করেছেন এবং সেগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় জেলা ট্রেজারিতে সংরক্ষণ করেছেন। প্রত্যেকটি উপজেলায় ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে, অনেকগুলো উপজেলা এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে উপজেলার প্রশিক্ষণগুলোয় উপস্থিত হয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রেখেছি। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত অনেকেই ইতিমধ্যে ডাকযোগে ‘পোস্টাল ব্যালট’ এ ভোট প্রদানের আবেদন করেছেন, আমরা সেটিরও উদ্যোগ নিয়েছি।