চট্টগ্রাম

নির্মাণ হচ্ছে ‘চট্টগ্রাম নৌকা জাদুঘর’, থাকবে ১৭ ধরনের নৌকা

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শীঘ্রই হাজার বছরের নৌ-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ‘চট্টগ্রাম নৌকা জাদুঘর’ এর নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাদুঘরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ লক্ষে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৭টি নৌকা সংগ্রহ বা রেপ্লিকা তৈরি করা হয়েছে।

এই জাদুঘরটিতে কেবলমাত্র নৌকাই নয় বরং নৌকার দাঁড়, গুণ, পাল ইত্যাদিও রাখা হবে।

একটি থ্রি-ডি থিয়েটার থাকবে যেখানে সমুদ্রগামী নাবিকগণ ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে কী ধরণের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি হয় সেটি তুলে ধরা হবে।

জাদুঘরে যেসব নৌকা থাকবে সেগুলো হলো- চট্টগ্রামের সাম্পান (বড়); যা ৮ ফিট। সাম্পান (ছোট); যা ২৫ ফিট, শুলুক ২০ ফিট। রাজশাহীর পানসি; যা ৮ ফিট, জোড়া নৌকা ৮ ফিট। কক্সবাজারের চাঁদ নৌকা; যা ৩ ফিট, ফিশিং ট্রলার ২৫ ফিট। কিশোরগঞ্জের গয়না; যা ৮ ফিট। গাইবান্ধার ফেটি; যা ৮ ফিট। ফরিদপুরের বিক; যা ২৫ ফিট। রংপুরের বাশের ভেলা; যা ১২ ফিট। সাভারের ডিংগি; যা ৮ ফিট

ময়মনসিংহের ময়ূরপংখী; যা ৩ ফিট। চাঁদপুরের ঘাসি; যা ৩ ফিট। পাবনার মালার; যা ২০ ফিট। তালের ডোংগা; যা ১২ ফিট।

এগুলোর বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী আরো নৌকা থাকতে পারে। আমরা সেগুলোও সংগ্রহের কাজ চলছে। এসব নৌকাগুলোর বাইরে নৌকা থাকলে সেগুলোর ছবি ও সন্ধান চট্টগ্রাম প্রশাসনকে দিতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘শুধু চট্টগ্রাম নয় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নৌকা, যেমন কোথাও বজরা নৌকা রয়েছে, কোথাও ময়ূরপঙ্খী, কোথাও পানশি কোথাও ডিঙ্গি, কোথাও বিগ, কোথাও আলিয়ার ডাঙ্গা, আর কোথাও বাঁশের ভেলা রয়েছে। একেকটি অঞ্চলে একেকটি নদী একেক ধরনের নৌকা, এবং সেই নৌকার যে ইতিহাস। সেটি আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য এই জাদুঘরটি করতে যাচ্ছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমরা যে ফুল উৎসবের আয়োজন করেছি তার একটি কর্নারে ১৫টি নৌকার একটি প্রদর্শনী রেখেছি। এই ১৫টি নৌকার মধ্যে দুই ধরনের সাম্পান রয়েছে। একটি বড় ধরনের সাম্পান আরেকটি ছোট সাম্পান। এর বাইরে চাঁদ নৌকা রয়েছে, পানশি রয়েছে, বজরা রয়েছে, বিগ রয়েছে। সামনে আরও কিছু নৌকা যুক্ত হবে। ’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমাদের নৌকা জাদুঘরের কাজ কিছুদিনের মধ্যে শুরু করতে যাচ্ছি। এ কাজ শুরু করতে আমাদের ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত আগতে পারে। নৌকা জাদুঘরে শুধুমাত্র এই নৌকাগুলোর প্রদর্শনী থাকবে সেটি নয়। এর বাইরে নৌকার সঙ্গে পাল, দাড় ও বৈঠা থাকবে। এর পাশাপাশি সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা কী ধরনের সমস্যায় পড়ে থাকে অনেক সময় ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে টর্নেডো হয়ে থাকে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে থ্রি-ডি এফেক্ট দিয়ে দর্শনের জন্য সেই চিত্র ফুটিয়ে তোলার। যাতে করে আমাদের দর্শনার্থীরা বুঝতে পারেন রিয়েল একটি অনুভূতি। সে বিষয়গুলো তুলে নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে আমাদের। আমরা আশা করছি সে কাজটি আমরা কিছুদিনের মধ্যে করতে পারব। ’

তিনি বলেন, ‘নৌকা জাদুঘরের জন্য ফৌজদারহাট যে ডিসি পার্ক হয়েছে, তার পাশেই স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। তার পাশেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ এবং জাদুঘর হবে। সেখানে নৌকা জাদুঘরটি করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এবং স্থান নির্বাচনের পর আমরা তিনটি ধাপে নৌকা জাদুঘর বাস্তবায়ন করতে চাই। একটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা, একটি মধ্যমিয়াদী এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আলোকে করতে চাই। স্বল্পমেয়াদি যেটি, তার আওতায় আমরা ইতিমধ্যে নৌকাগুলো তৈরি করে নিয়ে আসছি, সামনে আরও কিছু নৌকা আসবে। প্রায় শতাধিক নৌকা যেন আমরা আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে মিউজিয়ামটিতে স্থাপন করতে পারি, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ’

নৌকা জাদুঘরের অর্থায়নের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের যে ডিসি পার্ক, ফুল উৎসব বা নৌকা জাদুঘরের যে কাজগুলো আমরা করেছি, সেটা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সীমিত অর্থের মাধ্যমে করেছি। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় আমাদের দুটো প্রজেক্ট একটি অনুমোদন হয়েছে, আরেকটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যে প্রকল্পটি অনুমোদন হচ্ছে সেটা কিছুদিনের মধ্যে অর্থ ছাড় হবে। যে প্রজেক্ট অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, সেটা অনুমোদিত হয়ে গেলে নৌকা জাদুঘরের কাজ শুরু হবে। ’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ফৌজদারহাটে সাগর পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে ১২৭ ফুলের লক্ষাধিক গাছ লাগিয়ে গড়ে তোলা হয় ডিসি পার্ক। কিছুদিন আগেও যেখানে মাদকের হাট বসতো সেখানে এখন ফুলের মেলা। সেই পার্কে প্রতিবছরই হচ্ছে ফুল উৎসব। এ উৎসবে শামিল হচ্ছেন সব বয়সী মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *