নোয়াখালীতে খাদ্য সংকট, সাপের ছোবলে ৬৩ জন হাসপাতালে ভর্তি

নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হয়েছে। এতে পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ২১ লাখ মানুষ।

বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। এছাড়া গত তিন দিনে সাপের ছোবলে অসুস্থ হওয়া ৬৩ জন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি।
রোববার (২৫ আগস্ট) দুপুরের দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৮ জন সাপে কাটা ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১০৮ জন।

সেনবাগ উপজেলার স্থানীয়রা জানায়, ফেনীর মুহুরি নদীর উজানের পানি প্রবেশ করায় জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী উপজেলায় আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলায় গত দুই দিন বৃষ্টি না হলেও উজানের পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। অনেক জায়গায় ঘরবাড়ি ও সড়ক তলিয়ে গেছে। স্কুলে ঢুকে পড়েছে পানি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।

কবিরহাট উপজেলার স্থানীয়রা জানায়, বন্যা ও ভারি বর্ষণের কারণে কবিরহাটের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এদিকে দিন মজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলো কাজ করতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কর্মহীন মানুষেরা সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন সরকার ও বিত্তশালীদের কাছে।

নোয়াখালী জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। উজানের পানিতে বন্যার পানি বাড়ছে।

বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার আটটি উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। প্রতিটি বাড়িতে ৩ থেকে ৫ ফুট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিচু এলাকাগুলো যার পরিমাণ ৬ থেকে ৭ ফুট। বসত ঘরে পানি প্রবেশ করায় বুধবার রাত পর্যন্ত অনেকে খাটের ওপর অবস্থান করলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তারা নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্র, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অবস্থান নিয়েছেন।

বসত ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাবার সংকটে রয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। জেলার প্রধান সড়কসহ প্রায় ৮০ ভাগ সড়ক কয়েক ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কগুলোতে যান চলাচল অনেকটাই কম।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে আটটি উপজেলার মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। এসব উপজেলায় ইতোমধ্যে ৮২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় এক রাখ ৫৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় প্রায় ২১ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এর মধ্যে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসন এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।

যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি আমি সরেজমিন পরিদর্শনে আছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।