চট্টগ্রাম

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হচ্ছে এপ্রিলেই

অবশেষে আগামী এপ্রিল মাসেই চালু হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। এরই মধ্যে অপারেশনাল কাজের জন্য ১৪০ জন বাংলাদেশিকে নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পিসিটি অপারেশনের জন্য চুক্তি হওয়া সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি)। এছাড়া, এই টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আনা ৯ রিচ স্ট্যাকার ও ৪ এম্পটি হ্যান্ডেলার চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে। একটি শীর্ষ স্থানীয় শিপিং লাইনের মাধ্যমে পিসিটি অপারেশনাল কাজ শুরু হবে।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালুর প্রস্তুতি ও সর্বশেষ কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইমেইলের জবাবে পূর্বকোণকে এসব তথ্য জানান আরএসজিটি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এরউইন হ্যাজ। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, পিসিটি নির্বিঘ্ন অপারেশনের সুবিধার্থে বর্তমানে টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম, এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম এবং এটেনডেন্স সিস্টেমসহ প্রয়োজনীয় আইটি অবকাঠামোর কাজ চলছে। এছাড়া পিসিটির ইয়ার্ড পেইন্টিং প্রক্রিয়া চলছে এবং টার্মিনালের অবকাঠামো আরও উন্নত করার জন্য অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।এরউইন হ্যাজ বলেন, নিঃসন্দেহে এই ধরনের বিশাল একটি প্রকল্প শুরু করা, বিশেষ করে বাংলাদেশের বন্দরে প্রথম পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) উদ্যোগ এটি চালু করতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে আরএসজিটি জেদ্দা থেকে আমাদের অভিজ্ঞ টিমদের অটল সমর্থন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং কাস্টমসসহ আমাদের স্থানীয় স্টেকহোল্ডাদের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলি সহজে সমাধানের কাজ চলছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের কেনা কনটেইনার স্ক্যানারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম সোহায়েল এপ্রিলেই পিসিটি চালুর বিষয়টি ঘোষণা করেছিলেন। একই প্রসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, আরএসজিটি এপ্রিলে পুরোদমে অপারেশনের জন্য কাজ চালাচ্ছেন। এনবিআর, কাস্টমসসহ কিছু কিছু লাইসেন্স ও অনুমতির জন্য আমাদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। আশা রাখি তারা এপ্রিলে পিসিটি অপারেশনে যেতে পারবে।

উল্লেখ্য, প্রায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে একেবারেই খালি পড়ে আছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। এই টার্মিনালের সামনে দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্যবাহী জাহাজ আসা-যাওয়া করলেও এখানে কোনো জাহাজ ভিড়ত না। অথচ বহির্নোঙর হয়ে বন্দরের সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং কৌশলগত অবস্থান এই টার্মিনালটি তৈরি করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান জেটিগুলোতে নাব্যতা সংকটের কারণে সাড়ে নয় মিটার গভীরতার বেশি জাহাজ ভেড়াতে না পারলেও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে সাড়ে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। জাহাজ ভেড়ানোর ক্ষেত্রে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালকে অগ্রাধিকার দেয়া হলে বন্দরের আয় কমার শঙ্কা বন্দর ব্যবহারকারীদের। তবে পতেঙ্গায় গ্যান্টি ক্রেনের সুবিধা না থাকায় বর্তমানে এখানে শুধু গিয়ার ভেসেল (ক্রেনযুক্ত জাহাজ) ভিড়তে পারবে।

এদিকে চুক্তির নানা শর্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ৩০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব পেতে যাচ্ছে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ের কাছ থেকে। এর মধ্যে প্রতিটি ১০০ মার্কিন ডলার হিসাবে কমপক্ষে আড়াই লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জের ২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পাশাপাশি রিভার মুরিং চার্জ, পাইলটিং চার্জও রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, গত ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পিসিটি পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর এবং আরএসজিটিআই কনসেশন চুক্তি সই হয়। চুক্তির পরপরই ঢাকা থেকে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শন করেন সৌদি আরবের বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ।

২২ বছরের এই চুক্তি অনুযায়ী শুরুতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হবে এককালীন বড় অংকের অর্থ। এরপর প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি রাজস্ব ভাগাভাগিতেও আর্থিক লাভবান হবে চট্টগ্রাম বন্দর। টার্মিনাল পরিচালনার জন্য ইক্যুইপমেন্ট ক্রয় ও অন্যান্য খাতে আরএসজিটি বিনিয়োগ করবে ১৭০ মিলিয়ন ডলার।
এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী পিসিটিতে কাজের জন্য সুযোগ পাবে দেশীয় শ্রমিক-কর্মচারীরা। তবে এই টার্মিনালে জাহাজ আনা নেওয়া ও নাব্যতা রক্ষায় ড্রেজিংয়ের করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, গত ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালটি উদ্বোধন করেছিলেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *