বিনোদন

পপগুরুকে হারানোর ১৩ বছর

বাংলা ব্যান্ড জগতের নিভে যাওয়া এক নক্ষত্রের নাম আজম খান। তার মাধ্যমেই বাংলা সংগীত জগতে ব্যান্ড গানের যাত্রা শুরু। এ জন্য তাকে বাংলা ব্যান্ড সংগীত বা পপ গানের ‘গুরু’ বলা হতো। প্রতিভাবান এই শিল্পী অসংখ্য ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আপনজনদের কাঁদিয়ে ২০১১ সালের ৫ জুন চলে যান না ফেরার দেশে।

দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগে এদিন ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ১৩ বছর হয়ে গেল আজম খান নেই।

১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনিতে জন্মগ্রহণ করেন আজম খান। শৈশবের ৫ বছর সেখানেই কাটিয়েছেন তিনি।

৫ বছর বয়সে ঢাকেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। এরপর সপরিবারে কমলাপুরের বাড়িতে চলে যান। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি পাস করেন আজম খান। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময়েই সোচ্চার হয়ে ওঠেন আজম খান।

সে সময়ের ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচারে অংশ নেন তিনি। দলটির সঙ্গে ঘুরে ঘুরে গানও করেছেন। বরাবরই দেশের মানুষের কল্যাণে গান গেয়ে গেছেন এই পপগুরু। গানের প্রতি, বিশেষ করে গণসংগীতের প্রতি একটা বাড়তি টান থেকেই নিজেকে সংগীত জগতে বিলিয়ে দেন আজম খান।

এরপর ১৯৭১ সালে পাক হানাদারের বিরুদ্ধে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আজম খান।

কুমিল্লা ও ঢাকার আশপাশে সেকশন কমান্ডার হিসেবে অনেকগুলো গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন এই গায়ক। দেশ স্বাধীন হওয়ারপর ‘উচ্চারণ’ নামে একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন আজম খান। দেশের সংগীত জগতে তখন দারুণ আলোড়ন তোলে ব্যান্ডটি। এখান থেকে তিনি পশ্চিমা ঢঙে গান বানানো শুরু করেন। তবে তার গানগুলো ছিল সহজ-কথা সুরে।

কাগজ-কলমে কখনও গান লিখতেন না আজম খান। এমনকি নিজের এত এত গানের সংরক্ষণও তার কাছে ছিল না। মাথায় কোনো শব্দ এলে সেটাকেই বড় করে গানে রূপ দিতেন। এরপর সুর দিয়ে সেটাকে গাইতেন। জাদুকরি উপায়ে সেই অলিখিত কথা-সুর ছড়িয়ে যেতো দেশজুড়ে; যা এখনও সমানভাবে আকৃষ্ট করে দর্শক-শ্রোতাদের।

১৯৭২ সালে তার ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ আর ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি বিটিভিতে প্রচার হয়ে প্রশংসিত হয়। পরবর্তী সময়ে বিটিভিতে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ গান গেয়ে ব্যাপক আলোড়ন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন আজম খান।

আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে— ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অ্যাকসিডেন্ট’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’, ‘অনামিকা’, ‘আমি যারে চাইরে’ ইত্যাদি।

শিল্পকলায় (সংগীত) অবদানের জন্য ২০১৯ সালের মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয় তাকে। তবে আজম খানের শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। আজও এই কিংবদন্তির গান শোনা যায় শ্রোতাদের মুখে মুখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *