জাতীয়

পশু আমদানিতে সম্মতি দেবে না প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়

কোরবানি বা অন্য যে কোনও কারণে বা কোনও অজুহাতে পশু আমদানিতে সম্মতি দেবে না প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তাদের যুক্তি, পর্যাপ্ত পশু উৎপাদনে এখন সক্ষম বাংলাদেশ। এ খাতে যুক্ত হয়েছেন লাখ লাখ তরুণ উদ্যোক্তা খামারি। বিনিয়োগ করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। কোরবানিসহ সারা বছরের চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পশু দেশেই সরবরাহ করছেন খামারিরা। তাই আপাতত দেশে পশু আমদানির কোনও প্রয়োজন নেই বলে।

রাজধানীর মাংস বিক্রেতা সমিতির ভাষ্য অনুযায়ী, বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের বিক্রি এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। কারণ দেশে গরুর দাম বেড়েছে অত্যাধিক। বাড়তি দাম দিয়ে গরু কিনে মাংস বিক্রির ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার চাপে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য ভোক্তা পর্যায়ে দেশি গরুর মাংসের চাহিদা কমছে। এই সুযোগে হিমায়িত পণ্যের নামে দেশে ঢুকছে গরুর মাংস। এর ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রাজধানীর মহানগর মাংস বিক্রেতা সমিতির সভাপতি রবিউল ইসলাম।

গরুর মাংসের এত বেশি দাম নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলার কথাও ভাবছে সরকার। গত ৭ এপ্রিল বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ঢাকা সফররত ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার সঙ্গে বৈঠকে গরু আমদানি নিয়ে আলোচনা করেন। ব্রাজিলের মন্ত্রী বাংলাদেশে হিমায়িত গরুর মাংস বিক্রির প্রস্তাব দেন। বৈঠক থেকে বের হয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, তিনি ব্রাজিলকে সম্ভব হলে জ্যান্ত গরু পাঠাতে বলেছেন। এই কোরবানির ঈদের আগেই গরু পাঠানোর কথাও বলেন তিনি। তবে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

গত ৭ এপ্রিল ওই বৈঠকের পর গত ৫ মে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ হিমায়িত মাংস আমদানি, সংরক্ষণ এবং বিতরণ নীতিমালা ২০২৩ চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি নীতিমালাটি চূড়ান্ত করলে হিমায়িত মাংস আমদানি সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি দিয়ে বরাদ্দপত্র দেবে। তবে এর আগে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পশু আমদানির সম্মতি প্রয়োজন হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পশু আমদানিতে সম্মতি না দিলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পশু আমদানির অনুকুলে বরাদ্দপত্র দিতে পারবে না।

এর আগে গত ২৮ এপ্রিল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান বলেন, কোরবানির জন্য গবাদিপশু আমদানির কোনও প্রয়োজন নেই। কোনও অবস্থাতেই পশু আমদানির অনুমতি দেবে না সরকার। সারা বছরের পশুসহ পবিত্র ঈদুল আজহার সময় যে পরিমাণে পশু কোরবানির জন্য প্রয়োজন হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি পশু এই মুহুর্তে প্রস্তুত হয়ে আছে। কাজেই কোনও অবস্থায় পশু আমদানির প্রয়োজন নাই। এই মুহূর্তে পশু আমদানি করলে দেশের শত শত খামারি পথে বসে যাবে। তারা তাদের পশুর ন্যায্য দাম পাবেন না।

এরপর গত ১৬ মে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ ও অবাধ পরিবহন নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর মন্ত্রী আবদুর রহমান জানান, এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর কোনও সংকট হবে না। কোরবানির চাহিদার চেয়ে ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি অতিরিক্ত গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি যা গতবারের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪টি বেশি। ফলে কোরবানির পশু নিয়ে কোনোরকম সংশয়, সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, এই খাতে যুক্ত দেশের হাজার হাজার তরুণ খামারির স্বার্থে হিমায়িত মাংস আমদানিও নিরুৎসাহিত করা উচিত। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের এসব উদ্যোক্তারা পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে প্রবেশ না করে নিজেরাই কিছু করার চেষ্টা করছেন। সরকার এদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে। এমন পরিস্থিতিতে হিমায়িত মাংস আমদানি করলে এসব তরুর উদ্যোক্তা খামারি লোকসানের কবলে পড়বেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *