ধর্ম

পাঁঠা দিয়ে কী কোরবানি হয়?

‘পাঁঠা’ বলিদানের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উৎসব করে থাকেন। তাই সবার মনে প্রশ্ন জাগে, পাঁঠা দিয়ে মুসলমানরা কোরবানি দিলে হবে কিনা? ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, পাঁঠা ছাগলেরই জাত। কোরবানি ‘হবে না’-এমনটি বলা যাবে না। তবে পাঁঠা কোরবানি না করাই উত্তম।

কোরবানি প্রসঙ্গে পবিত্র হাদিসে এসেছে, মাহনাফ ইবনে সুলায়মান (রা.) থেকে বর্ণিত, আমরা রাসুলের (সা.) সঙ্গে আরাফায় অবস্থান করছিলাম। তখন তিনি বলেন, ‘হে লোক সকল! আমাদের প্রত্যেক গৃহবাসীর ওপর প্রতিবছর কোরবানি করা ওয়াজিব।’ (আবু দাউদ, ২৭৭৯)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ কোরবানি করতে বলেছেন ‘বাহিমাতুল আনআম’ বা ‘হিংস্র নয়’ এমন গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক জাতির জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি। রিজিক হিসেবে তাদের যেসব ‘বাহিমাতুল আনআম’ দিয়েছি সেগুলোর ওপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সুরা হজ : ৩৪)

তাই খাওয়া হালাল এমন যেকোনো পশু দিয়ে কোরবানি করা যায় না। হরিণ, বন্যছাগল, নীলগাই, খরগোশ ইত্যাদি খাওয়া হালাল হলেও এগুলো দিয়ে কোরবানি করা যায় না। কোরবানি করতে হবে ছয় ধরনের গবাদি পশু দিয়ে; সেগুলো হলো— উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা।

হাদিস শরীফে এসেছে, নবীজি (সা.) খাসি কোরবানি করেছিলেন। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুলের (সা.) নিকট দুটি মোটা তাজা সাদা কালো শিংওয়ালা খাসি আনা হলে তিনি দুটির একটি কোরবানি করলেন।’ (সুনানে ইবনে মাজা: ৩১২২)

ইসলামী চিন্তাবিদরা যা বলছেন—

জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মুফতি অছিউর রহমান আলকাদেরি বলেন, ‘কোরবানির পশু জবাই করার ক্ষেত্রে দেখতে হবে গরুর বয়স ২ বছর এবং ছাগল, ভেড়াসহ সকল ছোট পশুর কমপক্ষে ১ বছর পরিপূর্ণ হতে হবে। পাঁঠা ছাগল সেটাও এক ধরনের ছাগল। পাঁঠা দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ এবং হালাল পশু। আমাদের দেশে পাঁঠা দিয়ে কোরবানি দেওয়ার রীতি নেই। এছাড়া, অন্য ধর্মের মানুষ পাঁঠাকে উৎসবে ব্যবহার করেন। তাই মুসলমানেরা পাঁঠা ছাগল দিয়ে কোরবানি সচরাচর দেন না।’

জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আহমদুল হক সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘ছাগল হিসেবে পাঁঠা কোরবানি করা যায়। তবে পাঁঠা যেহেতু বলি দেওয়া হয়; তাই এটা দিয়ে মুসলমানরা কোরবানি দিতে সংকোচবোধ করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাঁঠাটাও মূলত ছাগল; কোরবানি করতে নিষেধ নেই। তবে এটি কোরবানি দেওয়া থেকে নিরাপদে থাকা ভালো; দূরে থাকা আফজল (অপেক্ষাকৃত ভালো; উত্তম)।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি কোরবানিদাতা না বুঝে এবং দেওয়ার মতো আর কোনো পশু না থাকে; ওই সময় পাঁঠা দিয়ে দেন তাহলে কোরবানি হয়ে যাবে। এটা যেহেতু অন্য ধর্মের মানুষ উৎসবে ব্যবহার করেন; তাই এটাকে মাকরূহ্ (এমন আমল যা পালন করার তুলনায় না করা উত্তম) বলা হয়েছে। বিভিন্ন ফকিহ-মুফতি ওই পশু দিয়ে কোরবানি করাকে মাকরূহ্ বলেছেন।’

‘তবে কেউ যদি পাঁঠা দিয়ে কোরবানি করে ফেলেন; তাহলে ‘কোরবানি হয়নি’— এটা বলা যাবে না। কারণ এটাও ছাগলের জাত। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলিদানের মধ্য দিয়ে যেহেতু উৎসব পালন করেন সেহেতু এটা দিয়ে কোরবানি না করাই উত্তম।’–যোগ করেন মাওলানা আহমদুল হক।

বিশিষ্ট ইসলামী গবেষক মুফতি নুরুল আবছার বলেন, ‘ছাগল বলতেই কোরবানির জন্য বৈধ। পাঁঠার মাংসে একটু বিশেষ গন্ধ থাকে; তাই অনেক মানুষ খেতে চায় না। তবে এটা দিয়ে কোরবানি দিলে অবৈধ হবে-এমন কোনো কথা নেই।’

এদিকে পাঁঠা ও খাসির পুষ্টিগুন সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘পাঁঠার চেয়ে খাসি একটু হৃষ্টপুষ্ট হয়। তবে দুটির পুষ্টিগুনে তেমন পার্থক্য নেই। আর রোগবালাইয়ের ক্ষেত্রে পাঁঠার অপেক্ষা খাসি ভালো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *