পার্বত্য চট্টগ্রাম

পাইকারিতে ২০ টাকার চিচিঙ্গা খুচরায় ৩ গুণ

কোনোভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না সবজির। গেল এক সপ্তাহে ১৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে অন্তত দশ সবজির দাম। এসব সবজির দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারিতে দাম বৃদ্ধির কথা বলছেন। তবে পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। কিছু কিছু সবজির দাম বাড়লেও খুচরার তুলনায় নগন্য। ২০২১ সালের কৃষি বিপণন বিধিমালা অনুযায়ী খুচরা পর্যায়ে ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ যৌক্তিক মুনাফায় ফসল ও কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু নগরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাইকারির চেয়ে ৫০ থেকে ৩০০ শতাংশ বেশি মুনাফায় সবজি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ভোক্তারা বিধিমালা ও পাইকারি পর্যায়ে দাম না জানায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খুব বেশি দর কষাকষির সুযোগও পান না।

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বন্দরনগরে গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে সবচেয়ে সরবরাহ বেশি চিচিঙ্গার। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে এই কৃষিপণ্যটি। তবে জাত ও আকার ভেদে ১৫ টাকা ও ২৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে কিছু চিচিঙ্গা। একই দিন নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকার কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে সবজিটি বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ পাইকারি বাজারের ২০ টাকার চিচিঙ্গা তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা মুনাফা করছেন ২০০ শতাংশ। একইভাবে পাইকারিতে ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজির মিষ্টি কুমড়া ৪ গুণের বেশিতে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।

অন্যান্য সবজির মধ্যে পাইকারিতে ঢেঁড়শ ৩০-৪০, টমেটো ৪০, শসা ৩০-৩৫, গাজর ৭০-৮০, কাকরল ৭০, ঝিঙ্গে ৪০-৪৫, আলু ৪৬, বরবটি ৮০ এবং করলা ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে গতকাল। একই দিন খুচরায় ঢেঁডশ ৬০, টমেটো ৬০, শসা ৭০, গাজর ১২০, কাকরল ১০০, ঝিঙ্গে ৭০, আলু ৬০, বরবটি ১০০ এবং করলা ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও খুচরায় ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে পেঁপে।

পাইকারি ও খুচরা বাজারে কৃষিপণ্যের এত বেশি তারতম্যের বিষয়ে ক্যাব ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, এখন অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ছে বলে সবজি ব্যবসায়ীদের মধ্যেও বেশি দামে সবজি বিক্রির এক ধরণের টেনডেন্সি তৈরি হয়েছে। পচনশীল পণ্যে ২০ শতাংশ মুনাফা করার কথা, কিন্তু তারা ৩০০-৪০০ শতাংশ বেশি মুনাফা করতেছে। এটা দেখার কেউ নেই। তাদের তো এই কাজে কেউ বাধা দিচ্ছে না। তাই এটা হচ্ছে।

সবাই এগিয়ে না আসলে ব্যবসায়ীদের থামানো যাবে না বলে দাবি জাতীয় ভোক্তা আধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক ফয়েজ উল্ল্যাহর। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদেরও ন্যায্য দামে পণ্য বিক্রির নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। নিজ থেকে ঠিক না হলে জোর করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সবদিক থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবজির দোকানেও পণ্য তালিকা রাখতে হবে, কিন্তু আমরা আভিযান চালিয়ে জরিমানা করলে তারা নানা কথা বলেন। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা তো সংখ্যায় অনেক, একা কয়জনকে থামানো যায়? তবু আমরা যথাসাধ্য কাজ করছি বাজার নিয়ন্ত্রণে।

এদিকে কুরবানির ঈদ ঘিরে দেশে চাহিদা বাড়ে মসলার। গতকাল নগরে মসলাপণ্যের মধ্যে পেঁয়াজ ৯০, রসুন ২২০, আদা ২৮০, এলাচ ৩৮শ ৮০, জিরা ৭০০, লবঙ্গ ১৩শ ৫০ এবং দারুচিনি ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

গেল সপ্তাহের চেয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৪০-৫০ টাকা কমলেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ-মাংস। নগরে ব্রয়লার মুরগি ১৬০-১৭০ টাকা, সোনালি ৩৩০ টাকা এবং দেশি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গরুর মাংস ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১১শ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আকার ভেদে রুই ২৬০ থেকে ৩৬০, কাতলা ৩২০ থেকে ৩৬০, মৃগেল ২০০-২৫০, আকার ভেদে পাঙ্গাস ১৮০-২২০, তেলাপিয়া ২০০-২২০, স্যালমন ফিশ ৪৫০, বাগদা চিংড়ি ৮০০, রূপচাঁদা জাত ও আঁকার ভেদে ৫৫০ থেকে ৭০০, পোয়া মাছ ২৫০, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০, সুরমা ৩৫০ থেকে ৬৫০, টেংরা ৩৭০ এবং নারকেলি মাছ ২৫০, পোঁয়া মাছ ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *