পাগলা মসজিদের দানবক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার
রীতি অনুযায়ী ৩ মাস পরপর খোলা হয় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স। তবে, রমজান ও ঈদের কারণে এবার ৪ মাস ১০ দিন পর খোলা হয়েছে এ দানবাক্স। এবার মিললো ২৭ বস্তা দেশি-বিদেশি মুদ্রা, স্বর্ণ ও রৌপ্যালঙ্কার। সেই সাথে রয়েছে মনোবাসনা পূরণের অসংখ্য চিঠি।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতে শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টায় মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়। এখন গণনার কাজ চলছে। এতে রূপালী ব্যাংকের পরিচালক, ডিজিএম এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।
এর আগে, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন রেকর্ড ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। দান বক্সে পাওয়া অর্থ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, এতিমখানা ও বিভিন্ন সমাজকল্যাণ কাজে ব্যয় করা হয় বলে জানিয়েছে মসজিদ পরিচালনা কমিটি।
জানা যায়, মসজিদটিকে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৩০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, একসময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম ও হিন্দু-নির্বিশেষে সব লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকার পাশপাশি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান-খয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।