চট্টগ্রাম

পারকি সৈকতের ঝাউগাছ বাঁচাবে কে

পারকি সমুদ্র সৈকতের শত শত ঝাউগাছ হারিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সৈকত এলাকা থেকে বালি উত্তোলন, ঘূর্ণিঝড় মোরায় আটকে পড়া ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজের প্রভাব, রক্ষণাবেক্ষণে বন বিভাগের উদাসীনতায় এই অবস্থা হয়েছে বলে জানালেন এলাকাবাসী। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সৈকতের অস্তিত্ব। এছাড়া সৌন্দর্যহানিও ঘটছে। ঝাউগাছ রক্ষায় আলাদা প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, পারকি সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধন ও উপকূল রক্ষায় বনবিভাগ ১৯৯৩–৯৪ সালে প্রায় ২৩ হাজার ঝাউগাছ রোপণ করে। ঝাউগাছগুলো বড় হয়ে সৈকতের বালুচরে শোভাবর্ধন করে। সারি সারি ঝাউগাছ পারকি সৌকতকে অপরূপ করে। ধীরে ধীরে এই সৈকত পরিচিতি লাভ করতে থাকে। ২০০২ সালে আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৮০ হেক্টর জায়গায় ঝাউগাছ রোপণ করা হয়। গাছগুলো বড় হওয়ার পর পর্যটকের পদচারণা বাড়তে থাকে। পরে এলাকাবাসীর দাবির মুখে পারকিকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী নুরুল আনোয়ার জানান, ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে পারকি সৈকতে আটকে পড়ে ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজ। এর ফলে সৈকতের স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হয়। এতে সৈকতের ঝাউবাগানের বেশি ক্ষতি হয়। শত শত গাছের গোড়ার মাটি সরে যায়। স্রোতে সৈকতের বালুচরের বালু সরে গিয়ে পলিমাটি জমে যায়। তখন সৈকত ও ঝাউগাছ রক্ষায় বনবিভাগ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। এরপর সৈকতের আশপাশের এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের ফলে সৈকতের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে। বর্তমান পারকি সৈকতের উন্নয়নে ৮০ কোটি টাকার উন্নয়ন কমপ্লেক্সের কাজ চলছে। কিন্তু সৈকতের প্রাণ ঝাউবাগানের আকার দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। তাই ঝাউগাছ রক্ষায় আলাদা প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

সরেজমিনে পারকি সৈকত ঘুরে দেখা যায়, সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধক ঝাউগাছগুলোর গোড়ার মাটি সরে গিয়ে গত ১০ বছরে শত শত ঝাউগাছ পড়ে গেছে। বর্তমানে পুরো ঝাউবাগান হুমকিতে আছে। ঝাউবাগানের আকার অনেক ছোট হয়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের তদারকি না থাকা, সৈকতের চর থেকে বালু উত্তোলনসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে সৈকতের এই বেহাল দশা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, জনবল সংকটের কারণে আমরা সৈকতের তদারকির কাজটা যথাযথভাবে করতে পারি না। বর্তমানে অনেকগুলো ঝাউগাছের মাটি সরে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে হলেও গাছগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন।

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে পারকি সৈকতের গুরুত্ব অনেক গুণ বেড়েছে। এটি একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি পারকি সৈকতের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ঝাউগাছ রক্ষার ব্যাপারে প্রয়োজনে আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *