জাতীয়

পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

দেশের অর্থনীতির উপর বিদ্যমান চাপ কমাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এক্ষেত্রে তিনি পুঁজিবাজারকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব শ্রেণিকে শক্তিশালী পুঁজিবাজার বির্নিমাণের নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বড় বিনিয়োগ এখান থেকে নিলে একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যবসা পরিবেশ সূচক বা বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স) জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এমসিসিআই ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ যৌথভাবে তৃতীয় বারে এবার বিবিএক্স জরিপ পরিচালনা করেছে।

এসময় পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সালমান এফ রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার বেড়ে যে পরিমান হয়েছে সে তুলনায় পুঁজিবাজার বড় হয়নি। ব্যবসায়ীদের পুঁজিবাজারে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির পাশাপাশি পুঁজিবাজার অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়া দরকার। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে পুঁজিবাজার সংস্কারে আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা এটা করব।

ডলার সংকট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে এসেছে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। ডলারের দাম ১১৭ টাকায় নেমে এসেছে। ডলারের সংকটও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে এসেছে। জুলাই থেকে মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, কোভিড-১৯ এর পর আমাদের রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দর বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির কারণে জুলাই থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করবে বলে আমরা আশাবাদী।

সালমান এফ রহমান বলেন, দেশের ব্যবসায়ীদের ওপর করহার কমানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যে বড় একটা অংশ করের বাহিরে রয়েছে, তাদের করের আওতায় আনতে হবে। দেশের রাজস্ব আয় না বাড়লে দেশ ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়বে। তাই এনবিআরকে কর আদায়ের পরিধি বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে জরিপের ফল তুলে ধরেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যবসা পরিবেশ সূচক বা বিবিএক্স অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের আরও অবনতি হয়েছে। এই অর্থবছরে ব্যবসা পরিবেশ সূচকে অর্জিত পয়েন্ট ৫৮ দশমিক ৭৫। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এটি ছিল ৬১ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। অর্থাৎ এক বছরে ব্যবসা পরিবেশের স্কোর ৩ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে।

এ বিষয়ে অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে ঠিক তবে সব অঞ্চলে ব্যবসা বান্ধব অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। জরিপ অনুসারে কোন কোন অঞ্চলে ব্যবসার উন্নয়নে কাজ করতে হবে তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করবে এমসিসিআই। আমরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সেই অঞ্চল নিয়ে কাজ করবো।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান। তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে বোঝার জন্য এই জরিপ করা হয়েছে। এতে কোন খাতে কেমন নীতি গ্রহণ করা দরকার তার ধারনা পাওয়া যায়। এর ফলে নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও বুঝতে পারবেন, তাদের কোন পথে চলতে হবে।

ব্যবসা শুরু, জমির প্রাপ্যতা, আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামোসুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বিরোধ নিষ্পত্তি, বাণিজ্য সহজীকরণ, কর পরিশোধ, প্রযুক্তি গ্রহণ, ঋণের প্রাপ্যতা এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান—এই ১১ সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপটি করা হয়েছে। পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান সূচকটি এবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এবারে জরিপে দেখা গেছে, উল্লিখিত ১১টি সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে খারাপ করেছে ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে। এই সূচকে প্রাপ্ত পয়েন্ট মাত্র ২৮ দশমিক ১১। গত বছরের জরিপে বলা হয়েছিল, ব্যবসায়ীদের ব্যাংকঋণ পাওয়ার বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করেছে। এবারের জরিপেও তার ধারাবাহিকতা দেখা গেল।

২০২১-২২ অর্থবছরে সামগ্রিকভাবে ব্যবসার পরিবেশ সূচকের ১০০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬১ দশমিক শূন্য ১। পরের বছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেই স্কোর সামান্য বেড়ে হয় ৬১ দশমিক ৯৫। ওই বছরে সূচকের মানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ার বড় কারণ ছিল ১০টি সূচকের মধ্যে ৪টির অবস্থা খারাপ হয়; বাকি ৬টি সূচক উন্নতির দিকে ছিল।

২০২২ সালের মতো ২০২৩ সালেও বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো করেছে অবকাঠামো খাতে। এই সূচকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর ৭১ দশমিক শূন্য ৮।

এ ছাড়া ব্যবসা শুরুর সূচকে ৬২ দশমিক ৭৪; জমির প্রাপ্যতা সূচকে ৫৩ দশমিক ১১; আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি সূচকে ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; শ্রম নিয়ন্ত্রণে ৭০ দশমিক শূন্য ৪; বিরোধ নিষ্পত্তিতে ৬২ দশমিক ৩৮; বাণিজ্য সহজীকরণে ৬০ দশমিক ৮৭; কর পরিশোধে ৫৪ দশমিক ৭৪; প্রযুক্তি গ্রহণে ৬৩ দশমিক ৫০ এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মানে ৫১ দশমিক ৫৯।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) প্রেসিডেন্ট জাভেদ আখতার এবং জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জিট্রো) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টার ইউজি আন্দো। এসময় এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী প্রমুখ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *