জাতীয়

পুলিশে ক্ষোভ: রাজারবাগে যা যা হল

শেখ হাসিনার পতন ঘিরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে বহু সদস্যকে হত্যার পর স্থবির হয়ে পড়া পুলিশকে সচল করার চেষ্টায় ঢাকার রাজারবাগে বৈঠকে দেখা গেল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় রক্তপাত ও হতাহতের জন্য কার দায়, অধঃস্তন কর্মকর্তাদের কীভাবে ঊর্ধ্বতনরা ব্যবহার করেন, এসবের পাশাপাশি বাহিনীর অভ্যন্তরীণ নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে নতুন পুলিশ মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলামের সামনেই ক্ষোভ দেখিয়েছেন এই সদস্যরা।

থানায় থানায় হামলা চালিয়ে হত্যার প্রেক্ষাপটে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আশ্রয় নিয়ে আছে বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য।পুলিশ সদস্যদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে কেবলই লাশ আর পোড়া থানার ছবি আদান-প্রদান করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারাই।

সোমবার থেকে পুলিশ উধাও হয়ে যাওয়ার পর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে শুক্রবার রাজারবাগে আইজিপির সঙ্গে এই বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুরে। কিন্তু সময় লেগে যায় অনেকটা।

কারণ, অনিয়ম দূর করার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের হত্যার বিচার চেয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ সহকর্মীরা, যে কারণে হইচই হট্টগোলেই কাটে বৈঠকের বেশিরভাগ সময়।

পুলিশের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভ প্রশমনের উদ্যোগ হিসেবে সেখানে আসার কথা ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।

তিনি রাজারবাগে আসবেন বলে পুলিশ লাইনসের মিলনায়তন প্রস্তুত করা হয়। পরে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা আসছেন না, আসবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনিও আসেননি।

বেলা ৪টা থেকেই রাজারবাগ মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা তাদের দাবি দাওয়া তুলে ধরে কথা বলতে থাকেন তখন থেকেই।

আলোচনায় শেখ হাসিনার পতনের পর থানাসহ পুলিশি স্থাপনায় হামলা ও অনেক পুলিশ সদস্য নিহতের জন্য ‘ঊর্ধ্বতনদের ভুল’কে দায়ী করছেন বিক্ষুব্ধরা।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে পুলিশ কেন জনগণকে ভোট দিতে দেয়নি, সেই ‘অন্যায্য চর্চা’ নিয়েও বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন সদস্যরা। পুলিশের রাজনীতিকরণের বিপক্ষে ও সংস্কারের দাবিও তুলেছেন তারা।

পুলিশ সদস্যরা সারাক্ষণ ‘ভুয়া ভুয়া’ চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।

বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে আইজিপি ময়নুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির কমিশনার মো. মাইনুল হাসান এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক শহিদুর রহমান গাড়িবহর নিয়ে রাজারবাগ যান।

তাদের মিলনায়তনে প্রবেশের সময়ও পুলিশ সদস্যরা সমস্বরে চিৎকার করে ওঠেন। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করে সদস্যদের কথা শোনেন আইজিপি।

আইজিপির সামনে মঞ্চে ওঠে বক্তব্য দেন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এবং ক্যাডার কর্মকর্তা। তবে হই-হট্টগোলের মধ্যে ‘কে শোনে, কার কথা’ অবস্থা ছিল সেখানে।

আইজিপির উপস্থিতিতেই স্লোগান ওঠে, ‘আমার ভাই মরল কেন জবাব চাই’, ‘পুলিশ হবে জনতার’।

কয়েকবার সেখানে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতির পরিস্থিতি হয়। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের এসপি সাইফুল ইসলাম সান্তুসহ কয়েকজন ক্যাডার কর্মকর্তা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন।

আইজিপি তাদের সব দাবি মেনে নিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে উপদেষ্টাদের সঙ্গে বসার আশ্বাস দেন। প্রায় দুই ঘণ্টা সেখানে অবস্থানের পর আইজিপি ও কর্মকর্তারা বেরিয়ে আসেন।

আইজিপি সেখানে বলেন, আপনাদের সব দাবি-দাওয়া আমরা শুনলাম। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। আমরা আগামী সপ্তাহে এই দাবি-দাওয়া নিয়ে আপনাদেরসহ সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বসব।

পুলিশ স্টাফ কলেজের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, আপনারা যে ১১ দফা দাবিনামা দিয়েছেন, সেগুলো খুব সুন্দর করে ড্রাফট করা হয়েছে। এগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি।

এই কর্মকর্তার কথা শুনে হাতে তালি দিয়ে সমর্থন দেন পুলিশ সদস্যরা।

মঞ্চে আইজিপি বসে থাকলেও কোনো শৃঙ্খলা দেখা যায়নি। যারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তাদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছিল না। কথা বলতে অনেকেই মঞ্চে উঠে যাচ্ছিলেন। তাদের ঠেকাতে বেগ পেতে হয় কর্মকর্তাদের।

বক্তব্য দিতে উঠে একজন পুলিশ সদস্য বলেন, বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার বাবা ভোট দিতে গেলে তাকে পুলিশ তাড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে বাবার সামনে মুখ দেখাতে পারেন না তিনি।

পুলিশ ‘হত্যা’র বিচার দাবি করে একজন সদস্য বলেন, যারা মারা গেছেন লক্ষ-কোটি টাকা দিলেও সেই ক্ষতি পূরণ হবে না। আমরা চাই ব্যবস্থা, ব্যবস্থা, ব্যবস্থা।

বক্তব্যের মধ্যেই মঞ্চের পেছনে বিশাল স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছিল বিভিন্ন জায়গায় নিহত পুলিশের লাশ আর রক্তাক্ত ছবি।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের কাউকে কেন সরকারের উপদেষ্টা করা হল না, সে প্রশ্নও তোলেন একজন।

আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার ও র‌্যাবের ডিজি এবং তাদের কয়েকজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছাড়া আর কারও পরনেই ইউনিফর্ম ছিল না। এটি নিয়েও কথা বলেন পুলিশ সদস্যরা।

একজন নারী পুলিশ সদস্য মঞ্চে উঠে বলেন, আজ এখানে আইজিপি স্যারের সঙ্গে মিটিং করতে আমার যথাযথ ইউনিফরম ও র‌্যাংক ব্যাজ পরে আসার কথা ছিল। কিন্তু আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখন পুলিশের ইউনিফর্ম গায়ে দিতে পারছি না। এই অবস্থার উত্তরণ চাই আমরা।

পুলিশ লাইনসের এই বৈঠকের সংবাদ সংগ্রহ করতে কয়েকটি টিভি চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল ও ছাপা পত্রিকার কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে যান। তবে কয়েকটি চ্যানেলের কর্মীদের দেখে পুলিশ সদস্য উত্তেজিত হয়ে উঠলে তারা রাজারবাগ ত্যাগ করে। তাদের অভিযোগ, অধঃস্তন পুলিশ সদস্যরা যে ‘অমানবিকতার শিকার হন, তা নিয়ে কোনো সংবাদমাধ্যমই কথা বলে না।

হট্টগোল থামছিলই না : বৈঠকের শুরুতেই র‍্যাবের মহাপরিচালককে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ডাকেন উপস্থাপক। তবে এ সময় একজন নারী পুলিশ সদস্য উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে এখানে আসতে হবে।

এ সময় একযোগে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। এরপর তিনি বক্তব্য না দিয়ে বসে পড়েন।

অডিটোরিয়ামে তখন পুলিশ সদস্যরা স্লোগান দিতে থাকেন। আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুলিশ সদস্যদের থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এরপর আইজিপি উঠে বক্তব্য শুরু করেন।

আইজিপি বলেন, আপনাদের এই ১১ দফা আমারও দাবি। আমরা এরই মধ্যে একটি কমিটি করে দিয়েছি, সেই কমিটিতে আপনাদের প্রতিনিধি রয়েছে, আমাদেরও প্রতিনিধি রয়েছে। তারা এই বিষয়ে করণীয় ঠিক করবেন।

প্রধান উপদেষ্টাকে ইতিমধ্যে সব বিষয়ে জানানো হয়েছে, তিনিও তোমাদের দাবির বিষয়ে নমনীয়। এই বিগত বছরগুলোতে যারা নির্যাতিত হয়েছে, যারা বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তারা কেউ আর বঞ্চিত হবে না। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যাদের অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, তাদের বরখাস্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে, ডিউটির সময়সীমা নির্ধারণ হবে। সেটি আট ঘণ্টাই করা হবে।

তবে আইজিপির বক্তব্যের মাঝে পুলিশ সদস্যরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। কয়েকজন বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এরপর আইজিপি তার বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে যারা কথা বলতে চান, তাদের মাইকের সামনে যেতে বলেন।

এরপর একজন কনস্টেবল বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, কোনো অফিসার মারা যায়নি, কারণ তারা আমাদের গুলি চালাতে বলে পালিয়েছেন। অথচ এই অফিসাররা যদি আমাদের বলতেন, ‘তোমরা গুলি করো না, সবাই চলে যাও, তাহলে এত মানুষও মরত না, এত পুলিশও মরত না।

আমাদের ভাইয়ের লাশ রাস্তায় পড়েছিল, কেউ আনতে যায়নি। আজকের নতুন সরকার হয়েছে, সেই সরকারে সাবেক পুলিশের কেউ নেই, কারণ আমাদের ওপর মানুষের আস্থা নেই। কেন আস্থা নেই? তার জন্য এই অফিসাররা দায়ী। নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে লক্ষ লক্ষ টাকা দিলেও তাদের জীবন ফিরে আসবে না।

যত ক্ষোভ ঊর্ধ্বতনদের ওপর

কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ থেকে অধঃস্তন সদস্যরা ঊর্ধ্বতনদের কথা শুনছেন না। ডিএমপিতে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, ওরা এখন আমাদের শত্রুজ্ঞান করছেন, কথা শোনা তো দূরের কথা। সংঘাতে পুলিশ সদস্যরা মারা গেছেন, আমাদের ক্যাডার সার্ভিসের কেউ কেন মরেননি, সে প্রশ্নও তুলছেন তারা। আমাদের স্যাররা তাদের সব দাবি মেনে নিয়েও শান্ত করতে পারছে না।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের অধঃস্তনদের বিপদের মুখে রেখে পালিয়েছেন, ঠিকমত তথ্য দেননি- এমন অভিযোগ করে ঢাকার একটি থানায় কর্মরত একজন এসআই বলেন, আমাদের অফিসাররা তো বুঝতে পারছিলেন যে হাসিনাশাহীর পতন হচ্ছে। তারা পালিয়ে গেলেন। আর আমাদের মরতে রেখে গেলেন।

আমাদের লোকেরা রামপুরা, বাড্ডা, চানখারপুল, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় ওইদিন (৫ অগাস্ট) দুপুর বেলা পর্যন্ত গোলাগুলি করেছেন। এদিকে যে সরকার পতন হয়ে যাচ্ছে সেই খবর আমাদের ঘুণাক্ষরেও জানানো হয়নি। সকালে জানলেও আমাদের লোকগুলো সাধারণ পাবলিকের মধ্যে ঢুকে গিয়ে নিজের জীবনটা বাঁচাতে পারত। কিছু থানাও রক্ষা করা যেত।

রাজারবাগ অডিটোরিয়ামের বাইরের পুকুর পাড়ে গোল হয়ে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ডেকে নিজেদের ক্ষোভের কথা বলছিলেন পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ সদর দপ্তর, এসবি ও ডিএমপির কয়েকজন আলোচিত কর্মকর্তার নাম ধরে গালিগালাজ করছিলেন বিক্ষুব্ধ পুলিশ সদস্যরা। তাদের কারণেই পুলিশের এই পরিণতি বলে অভিযোগ তাদের। পাশাপাশি পুলিশের অধঃস্তন কর্মীদের সঙ্গে ‘চাকরবাকরে’র মত আচরণ করা হয় বলেও অভিযোগ তাদের।

গুলি করতে বাধ্য করার অভিযোগ

পুলিশের ঢাকার গুলশান বিভাগে কর্মরত একজন এডিসি বলছেন, আমি এখনও ট্রমা থেকে বের হতে পারিনি। সেদিন যে কীভাবে বেঁচে ফিরেছি, তা একমাত্র আল্লাহ জানেন। উত্তরা থেকে মিছিলটা যে ঢাকার ভেতরে ঢুকে গেছে, সেই খবরটাও আমাদের স্যাররা আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি।

তারা খালি গুলি করার আদেশ দিয়ে গেছেন, কেউ গুলি না করলেই তাকে বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দেওয়া হত। প্রসিকিউশনের (শাস্তি) ভয়ও দেখানো হত।

সিআইডির একজন এসআই বলছেন, আমি ১৩ বছর পুলিশে চাকরি করি। এই বন্দুকটা কোমরেই বয়ে নিয়ে গেলাম কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পাবলিককে একটা গুলি করার প্রয়োজন পড়েনি।

আমাদের বেশিরভাগ পুলিশই এমন। কারণ ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ ছাড়া আমরা গুলি করতে পারি না। এই কয়দিনে আমাকে কেন এত গুলি ছুঁড়তে হল, সেটা আপনাদের যুক্তি দিয়ে বুঝতে হবে। এখন গুলি করার জন্য সাধারণ মানুষ আমাদের দায়ী করছে। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে সিনিয়র অফিসাররা অর্ডার করলে আমাদের তা মান্য করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।

নিজেকে পুলিশের ‘বঞ্চিত পক্ষের’ দাবি করা একজন অতিরিক্ত ডিআইজি বলছেন, নতুন সরকারের পক্ষ থেকে ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার করার কথা বলা হচ্ছে। এই বিচার শুরু হলে অনেক ওসি, এসআই এবং পুলিশ সদস্য ফেঁসে যান কি না, সে দুশ্চিন্তাও রয়েছে অনেকের মধ্যে।

এই পরিস্থিতিতে আন্দোলন ঘিরে প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশ সদস্যরা দায়মুক্তি চাইছেন বলে ওই অতিরিক্ত ডিআইজির বক্তব্য।

তিনি বলছেন, বিশেষ করে ঢাকার থানাগুলোতে নিয়োগ হয় পুরোপুরি পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি বিবেচনায়। তারাই বেশি উৎসাহ দেখিয়ে জনতাকে গুলি করেছেন। দীর্ঘদিন ঢাকায় চাকরি করা এই পুলিশ সদস্যরা অনেক পয়সার মালিক। তারা এখন নানাভাবে পুলিশে অস্থিরতা তৈরি করতে চান। আর তাদের সঙ্গে পুলিশের আলোচিত কিছু প্রভাবশালী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও রয়েছেন।

তবে আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, পুলিশের আইনে (পিআরবি) বলা আছে এ ধরনের সিভিল ডিজঅবিডিয়েন্সের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রথমে নন-লিথাল উইপন ব্যবহার করবে। নিজের প্রাণ রক্ষার প্রয়োজন হলে পুলিশ লিথাল আর্মসও ব্যবহার করতে পারে। তাই এ বিষয়ে আইনগতভাবে তারা বিপদে পড়বেন, এমন সম্ভাবনা কম।

তবে অনেক ভিডিওতে দেখা গেছে কাছে থেকে নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করেছেন পুলিশের কেউ কেউ। তাদের খুঁজে খুঁজে সাজা দেওয়া উচিত।

পুলিশের এই কর্মকর্তার ভাষ্য, এখন পুলিশ সদস্যরা নির্দেশ মান্য করার যে যুক্তি দিচ্ছেন, তা যে খুব বেশি ধোপে টিকবে তাও না। পুলিশের আইনে বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আইনি নির্দেশ মেনে নিতে তিনি বাধ্য। সেটা যদি অবৈধ হয়, তাহলে সে তা করতে বাধ্য নয়।

ডিএমপির দুজন কনস্টেবল, তিনজন এসআই এবং এসি ও এডিসি পর্যায়ের দুজন ক্যাডার কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। তারা সবাই বলেছেন, গুলি করার এমন কী বার্স্ট ফায়ার করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

‘আছে গুজবও’

পুলিশ সদস্যদের মোবাইলে ঘুরছে লাশের ছবি। ছবি দেখে মনে হল, এর অনেকগুলো মধ্যপ্রাচ্যের কোনো যুদ্ধের। আবার কেউ বলছেন, এখনও এখানে ওখানে কয়েকশ পুলিশের লাশ গুম করে রাখা হয়েছে। এখন এ রকম নানা গুজবে ভাসছে রাজারবাগ।

গত বুধবার পুলিশের আইজি ময়নুল ইসলাম দায়িত্ব নিয়েই যে সংবাদ সম্মেলনে ডেকেছিলেন তখন তার কাছে পুলিশ হতাহতের সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তখনও ‘প্রকৃত সংখ্যা’ নির্ধারণের কাজ চলছে বলে তিনি বলেছিলেন।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুজন বলেন, তারা মনে করেন এখনই পুলিশ নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হলে ফোর্সের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। আর দেশব্যাপী থানার কার্যক্রম না থাকায় সংখ্যাটা সুনির্দিষ্টভাবে বলাও কঠিন।

আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংখ্যা প্রকাশ করা না হলেও শুক্রবার রাজারবাগে পুলিশের সদস্যরা বলছেন, তারা শুনেছেন কয়েক হাজার পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। যাত্রাবাড়ীর ড্রেনেই পুলিশের শত শত মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।

কোথা থেকে এমন সংবাদ পাচ্ছেন, জানতে চাইলে তারা বলছেন, ‘ফেইসবুকে দেখেছেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *