চট্টগ্রাম

প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের হাজারো গ্রাহকের কোটি টাকার হদিস নেই

সীতাকুণ্ডে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের হাজারো গ্রাহকের কোটি টাকার কোন হদিস মিলছে না। মেয়াদ পূর্তির পর তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ায় টাকার জন্য এসব গ্রাহকরা সংশ্লিষ্ট অফিস ও কর্মকর্তাদের কাছে ধর্ণা দিলেও সন্তোষজনক কোন জবাব মিলছে না। এতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা এক মাঠকর্মীর বাড়ি ঘেরাও করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টাকা জমিয়ে রাখলে মেয়াদ পূর্তির পর লভ্যাংশসহ অনেক টাকার মালিক হতে পারবেন এমন আশা দিয়ে সীতাকুণ্ডে হাজারো গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সরেন্স নামক একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে একাধিক মাঠকর্মী উপজেলার বাড়বকুণ্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে মাসিক বিভিন্ন অংকের টাকা সংগ্রহ করে তা কোম্পানির একাউন্টে জমা দেয়। ১০ বছর পর এসব টাকার মেয়াদ পূর্তি হলে লভ্যাংশসহ দেড়গুণ টাকা পাবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়ায় গ্রাহকরা সরল বিশ্বাসে টাকা জমা রাখেন। এদিকে ২০২১ সালে মেয়াদ পূর্তির পর গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাবার জন্য অফিসে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা নানান অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এভাবে পেরিয়ে গেছে তিনটি বছর। কিন্তু শত শত গ্রাহকের টাকার হদিস মেলেনি। বাধ্য হয়ে যে মাঠকর্মীর মাধ্যমে টাকা জমা দেয়া হয় গত শনিবার সেই মাঠকর্মীর বাড়ি ঘেরাও করেন গ্রাহকরা।

এ বিষয়ে এক গ্রাহক বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ভায়েরখীল গ্রামের বাসিন্দা গ্রাহক নাসিমা আক্তার জানান, মাঠকর্মী খদিজার মাধ্যমে তিনি প্রতিমাসে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ১২ বছরের জন্য ডিপিএস করেন। মেয়াদ শেষে আর টাকা পাচ্ছেন না। অপর গ্রাহক উন্মে ছকিনা বেগম বলেন, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের সহকারী ম্যানেজার খদিজা বেগম আমাকে ভবিষ্যতে লভ্যাংশসহ টাকা ফেরত পাবার নিশ্চয়তা দিয়ে ২০১১ সালে মাসিক ২০০ টাকা করে একটি ডিপিএস করান। ২০২১ সালে মেয়াদ পূর্তি হলে কাগজপত্র নিয়ে গিয়ে আর টাকা পাইনি। তিন বছর পরেও তারা কখন টাকা দেবে তা বলতে পারছেন না।

গ্রাহক মনোয়ারা বেগম বলেন, তিনি ১২ বছরের জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন। সেই সাথে করেছিলেন প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে ডিপিএসও। দুটোর মেয়াদ তিন বছর আগেই পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু টাকা পাচ্ছেন না। একইভাবে এখনো টাকা পাননি সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ভায়েরখীল ও আলী চৌধুরী পাড়া এলাকার ফিরোজা, পারভীন আক্তারসহ শতাধিক গ্রাহক। পুরো উপজেলায় এ সংখ্যা হাজারের মতো।

মেয়া পূর্তির পর ডিপিএস এর বইসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা নেয় কর্মকর্তারা। জমা নেওয়ার সময় মাসখানেকের মধ্যেই সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করে তাদের হাতে চেক তুলে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তারা। কিন্তু কথাও কাজে কোন মিল নেই।

বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের শত শত গ্রাহকের কোটি কোটি টাকার হিসেব নেই। মেয়াদ শেষের কয়েক বছর পরও টাকা না পাওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে মাঠকর্মী খদিজার বাড়ি ঘেরাও করলে খবর পেয়ে আমি ছুটে যাই। এসব বিষয়ে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারছেন না।

গ্রাহকদের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রগ্রেসিভভ লাইফ ইন্সুরেন্সের অর্থ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা কর্মী মনোয়ারা বেগম ও কর্মী নিরু বেগম জানান, ইন্সুরেন্স সম্পর্কে কোন ধরনের অভিজ্ঞতা নেই তাদের। তাদেরকে শুধুমাত্র গ্রাহকদের বুঝিয়ে ইন্সুরেন্স করিয়ে টাকা সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছিলেন খাদিজা। সংগ্রহের টাকা থেকে তারা কমিশন পেতেন।

জানতে চাইলে শতাধিক গ্রাহকের টাকা না পাওয়ার বিষয়টি সত্যি জানিয়ে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের সহকারী ম্যানেজার খদিজা বেগম বলেন, কর্মীদের গাফিলতির কারণে মেয়াদ পূর্তির পরও সঠিক সময়ে কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি তারা। তারউপর জমা দিলেও প্রতিষ্ঠানের অর্থ সংকটের কারণে গ্রাহকের সঞ্চিত টাকার চেক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জুলাই মাসে এসব গ্রাহকদের চেক দেওয়া হবে বলে হেড অফিস থেকে তাকে জানানো হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে যে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে জুলাই মাসে চেক মিলবে কিনা সে বিষয়ে সন্দিহান তিনিও।

এ বিষয়ে জানতে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের সীতাকুণ্ড শাখা অফিসের ইনচার্জ মো. নুর উদ্দিন জানান, সীতাকুÐ শাখায় ডিপিএস, মেয়াদী বীমাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা রাখা প্রায় এক হাজার গ্রাহকের মেয়াদ পূর্তি হয়েছে। এসব গ্রাহকরা এক কোটি টাকা পাবেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের অর্থ সংকটের কারণে তারা এই মুহূর্তে টাকা ছাড় দিতে পারছেন না। জুলাই মাসে সারাদেশে সংস্থাটির যতগুলো অফিস রয়েছে সে অফিসগুলোর জন্য ২ কোটি টাকা ছাড় দিবেন। সেই হিসেবে তারা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পাবেন। সে টাকা দিয়ে তাদের কিছুই হবে না। কিন্তু দেরি হলেও শেষ পর্যন্ত গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *