বিনোদন

প্রিন্স মামুন ছিলেন লায়লা আক্তারের জিগোলো

প্রিন্স মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রিন্স মামুন ছিল লায়লা আক্তারের জিগোলো। সেই অল্প বয়সী তরুণদের জিগোলো বলা হয়। যারা টাকা পয়সা আর নানা উপহার সামগ্রীর বিনিময়ে বয়স্ক মহিলাদের সঙ্গ দেয়। মূলত যৌনসঙ্গ। ৪৮ বছর বয়সী লায়লা ২৪ বছর বয়সী মামুনকে জিগোলো হিসেবেই রেখেছিলেন। মামুনকে তিনি মাঝে মাঝে টাকা দিতেন, তার বিনিময়ে সুদর্শন তরুণটির সঙ্গ উপভোগ করতেন।

মামুনকে শুধু যৌনসঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করতেন না, মামুনকে তিনি টাকা রোজগারের জন্যও ব্যবহার করতেন। মামুনের পেছনে তিনি যত টাকা ব্যয় করতেন, তার চেয়ে বেশি তিনি মামুনের সঙ্গে ভিডিও বানিয়ে আয় করতেন। জনপ্রিয় টিকটকার মামুন নাচতো, বা গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলাতো, তার পাশে রং করা পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকতেন লায়লা। এসব অর্থহীন রুচিহীন ভিডিও ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুকে আপলোড করতেন। শুধু নাচ গানের ভিডিও নয়, মামুন খাচ্ছে, মামুন হাসছে, মামুন খেলছে—সব কিছুর ভিডিও তার করা চাই। মামুনকে দেখার জন্য দর্শক শ্রোতা এত বেশি ছিল যে তিনি এ থেকে মোটা অংকের টাকা রোজগার করতেন। করতেনই বা বলি কেন, রোজগার এখনও করছেন।

তিনি ধনী। মামুন দরিদ্র। তিনি চেয়েছিলেন মামুনকে সারা জীবন তার জিগোলো বানিয়ে রাখতে এবং মামুনের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে টাকা উপার্জন করতে। এতে বাধ সাধলো মামুন। লায়লার চরম অপমান সহ্য করতে না পেরে সে লায়লার সঙ্গে তিন/চার বছরের সম্পর্কের ইতি টানলো। সম্পর্কে ইতি টানা কেন মেনে নেবেন লায়লা? যদিও যে কারও যে কোনো বন্ধুত্বের, প্রেমের, বিয়ের, এমনকী জিগোলোর সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার অধিকার আছে। কিন্তু মামুনকে সে অধিকার কিছুতেই দিতে চাননি লায়লা। ফেসবুকে সারাক্ষণই মামুনের জন্য তার কান্নাকাটি চলতে থাকে, মিডিয়ার লোক নিয়ে চলে যান মামুনের গ্রামের বাড়িতে। মানুষকে দেখান মামুনকে তিনি ভালবাসেন। মামুনকে তিনি আদৌ ভালবাসেন বলে মনে হয় না। মামুনের জন্য সামান্য ভালবাসা থাকলে তিনি তার বিরুদ্ধে মামলা করে তার সর্বনাশ করতে পারতেন না।

লায়লার মতো চালাক চতুর নয় মামুন। সে বিশ্বাস করেছিল লায়লা তার ফ্যান, লায়লা তাকে ভালবাসেন। লায়লা তেমনই বলেছিলেন মামুনকে। মামুনের গ্রামের বাড়ি কোথায়, তার নানির বাড়ি কোথায়, তার পরিবারে কে কে আছে, কী করে তাদের সংসার চলে, মা কে, বাবা কে, বন্ধু বান্ধব কারা, মামুনের বয়স কত, কত টাকা উপার্জন করে, সেই টাকায় সে কী কী কিনেছে—সব কিছু প্রকাশ করলেও তার নিজের বয়স কত, তার বিয়ে হয়েছিল কিনা, তার সন্তান আছে কিনা, তিনি কী চাকরি করেন, তার বাবার নাম ইত্যাদি পারিবারিক কোনো তথ্যই তিনি প্রকাশ করেননি। মিডিয়া কোনো প্রশ্ন করলে তিনি কায়দা করে উত্তর এড়িয়ে গেছেন।

মামুনের পরিবারের দারিদ্র নিয়ে, মামুন এবং তার পরিবারের সবার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কম তুচ্ছ তাচ্ছিল্য তিনি করেননি। নিজের ধন দৌলত নিয়ে লায়লা সব সময় গর্ব করেছে, নিজের ডিগ্রি, নিজের চাকরি, নিজের বেতন, নিজের বাড়ি গাড়ি ধন দৌলত নিয়ে তার অহংকারের শেষ নেই। আর মামুনকে কখন কত টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন, মামুনকে কত টাকা দামের কী উপহার দিয়েছেন, সবই বিশ্ববাসীকে বারবারই জানিয়ে দিয়েছেন। লায়লা এখন মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ঠুকে দিয়েছেন, মামুন নাকি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। এমন বানোয়াট কথা তার মতো অসৎ, স্বার্থান্ধ এবং মিথ্যুক মহিলার পক্ষেই বলা সম্ভব।

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক করলে প্রতারণা হয়, ধর্ষণ হয় না। অনুমতি ছাড়া যৌনসম্পর্ক করলে হয় ধর্ষণ। লায়লা বুঝে গিয়েছেন মামুন আর তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবে না, জিগোলো সম্পর্কটি চুকে বুকে গেছে। মামুনকে আগের মতো নিয়ন্ত্রণ করাও তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এই কারণে তার এত রাগ মামুনের ওপর। মামুনকে বহুবার তিনি হুমকি দিয়েছেন তার সঙ্গে একত্রবাস না করলে, তার সঙ্গে আগের মতো ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েট’ না করলে বা ভিডিও না বানালে তিনি মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণের মামলা তুলে নেবেন না। যখন দেখেছেন মামুন কিছুতেই তার কাছে ফিরে যাবে না, তখন বলেছেন, তাকে নব্বই লক্ষ টাকা দিলে তিনি মামলা তুলে নেবেন। মামুনকে কী করে হেনস্থা করা যায়, কীভাবে তাকে নিঃস্ব করে ফেলা যায়, তিনি করছেন, এভাবেই তিনি তাঁর অনুদার এবং হিংস্র চেহারাটি মুখের পুরু প্রলেপের মতো প্রলেপ দিয়ে ঢেকে মামুনের বিরুদ্ধে নানা রকম অদ্ভুত অভিযোগ করছেন।

মামুনের বড় দুই ভাইবোন প্রতিবন্ধী। তারা কথা বলতে পারে না। তার অসহায় মা বাবা আর ভাই বোনের জন্য টিকটিক আর ইউটিউব থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে একখানা একতলা বাড়ি বানিয়েছে মামুন, পরিবারের মানুষগুলোর মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। কিছুদিন আগে ঢাকায় একটি সেলুনের ব্যবসা শুরু করেছে সে। সেই সেলুনের উদ্বোধনের দিন লায়লা গিয়েছেন, হাজারো ভক্ত মামুনকে দেখতে এসেছিল। লায়লা ব্যস্ত ছিলেন নিজের চেহারা দেখাতে। প্রেস কনফারেন্সের ভিড়ে সবাইকে দেখিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে মামুনের মুখের ঘাম মুছে দিয়ে দরদী প্রেমিকার অভিনয় করে আসার দুদিন পর ধর্ষণের মামলা ঠুকে দিয়েছেন মামুনের বিরুদ্ধে। লায়লার আত্মীয় স্বজন মিলিটারিতে, ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশও মনে হয় মিলিটারির আদেশ পালন করতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

সত্যিকার নারীনির্যাতক আর ধর্ষকরা দেশময় ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে না। আর মামুনের মতো স্ট্রাগল করা এক তরুণকে তড়িঘড়ি গ্রেপ্তার করেছে। রিমান্ডে নেওয়া হবে বেচারাকে, বেধড়ক পেটানো হবে। যে তরুণ লায়লার প্রতারণার শিকার, সে এখন শিকার হচ্ছে মিথ্যে মামলার, ফেঁসে গেছে আইনের মারপ্যাঁচে। মামুনের আত্মীয়স্বজন লায়লার আত্মীয়স্বজনের মতো প্রভাবশালী নয়। সুতরাং মামুনকে ভুগতে হচ্ছে, ভুগতে হবে। না বুঝে সে আটকা পড়েছে লায়লার পাতা ফাঁদে।

মামুনকে মুক্ত করার জন্য, আশা করছি, মানবাধিকারের জন্য যে আইনজীবীরা লড়েন, এগিয়ে আসবেন। লায়লা আর মামুনের এই দ্বন্দ্ব বা লড়াই আসলে নারীবাদ আর পুরুষতন্ত্রের লড়াই নয়, এ ধনী আর দরিদ্রের লড়াই, সবল আর দুর্বলের লড়াই, দম্ভ আর অসহায়ত্বের লড়াই, শিকারী আর শিকারের লড়াই।

নারী হয়ে জন্ম নিয়েছে বলেই সে ভাল, সে সত্যবাদী, এ আমি মনে করি না। পুরুষ যেমন বদমাশ হতে পারে, নারীও তেমন বদমাশ হতে পারে।

লেখকঃ তসলিমা নাসরিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *