চট্টগ্রামপার্বত্য চট্টগ্রাম

প্রেমের টোপ ফেলে গৃহবধূকে ধর্ষণ, ব্ল্যাকমেইলিংয়ে স্ত্রীও

প্রথমে প্রেমের ফাঁদ ফেলে গৃহবধূকে দেখান বিয়ের প্রলোভন। এরপর বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে করেন একাধিকবার ধর্ষণ। আবার অন্তরঙ্গ সেই মুহুর্তের ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে নিয়েছেন ৩০ হাজার টাকাও। তাতেও ক্ষান্ত হননি ওয়ার্কশপ কর্মচারী শহিদুল। ভিডিও ডিলিট করার আশ্বাসে ফের মিটিয়েছেন নিজের লালসা। উপায়ন্তর না পেয়ে ওই গৃহবধূ জানান তার স্বামীকে। তার স্বামী গিয়ে শহীদুলের স্ত্রীকে সবটা খুলে বললেও তিনিও করেন ব্ল্যাকমেইল। হুমকি দেন, দিতে হবে এক লাখ টাকা নাহয় ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে ফেসবুকে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ মামলা করলে চম্পট দেন ধর্ষক শহিদুল। তবে হয়নি শেষ রক্ষা।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি থানার তিন টহরী গোদারপাড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলাম (৪৪) খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি থানার ১ নম্বর মানিকছড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউছুপ আলী বাড়ির মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন ওয়ার্কশপ মিস্ত্রী।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আসামি শহিদুল ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নগরের পতেঙ্গা থানার কাটগড় নাজিরপাড়া এলাকায় মামলার দুই নম্বর আসামি সুমন দে’র (৪০) বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করা হয়। সেই ভিডিও মুঠোফোনে ধারন করে ওই গৃহবধূর পরিবারকে দেখাবে বলে হুমকি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কের জন্য ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে শহিদুল। একপর্যায়ে শেষবারের মতো শারীরিক সম্পর্ক করলে ভিডিও ডিলিট করার আশ্বাসে ১০ মার্চ ফের ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করে শহিদুল।

কিন্তু এরপরেও ভিডিও ডিলিট না করে শহিদুল এবং দ্বিতীয় আসামি সুমন ভিকটিমের কাছে টাকা দাবি করে। তিন কিস্তিতে ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও ব্ল্যাকমেইল করে ফের ২০ মার্চ ভিকটিমকে ধর্ষণ করা হয়। উপায়ন্তর না পেয়ে ওই গৃহবধূ তার স্বামীকে জানালে তার স্বামী বিষয়টি শহীদুলের স্ত্রীকে জানান। কিন্তু উল্টো শহীদুলের স্ত্রীও ১ লাখ টাকা দাবি করেন। নাহয় ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর হুমকি দেন। পরবর্তীতে ভিকটিম এ ঘটনায় চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করলে ২০২৩ সালের ২০ মার্চ আদালত মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘মামলা দায়েরের পর আসামি শহীদুল পালিয়ে যায়। মামলার তদন্তভার পাওয়ার পরেই আসামি শহীদুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু সে বারবার স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। সবশেষ তাকে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির তিন টহরী গোদারপাড় এলাকায় ট্রেস করি এবং গ্রেপ্তার করি। এসময় তার কাছ থেকে একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়।’

পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আসামি শহীদুল এভাবে প্রতারণা করে এবং নারীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করতো। এতে তার বন্ধু সুমন দে এবং স্ত্রীও সহযোগিতা করতো। সে মূলত পেশায় একজন ওয়ার্কশপ কর্মচারী। স্ত্রীর সাথে নগরীর পতেঙ্গায় তিনি ভাড়া বাসায় থাকতো। মামলা দায়েরের পর বারবার অবস্থান পাল্টে তিনি গোদারপাড় এলাকার সাব্বিরের গ্যারেজ নামক একটি ওয়ার্কশপে কাজ নেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *