চট্টগ্রামশিক্ষা

বড় চ্যালেঞ্জ প্রশিক্ষিত শিক্ষকের স্বল্পতা

‘শহরে ক্যাম্পাসের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার অভাব, ব্র্যান্ডিংয়ের ঘাটতি এবং ভালো জব মার্কেট না থাকার কারণে নর্থ সাউথ বা ব্র্যাক’র মতো বিশ্বমানের ইউনিভার্সিটি গড়ে উঠেনি চট্টগ্রামে। প্রশিক্ষিত শিক্ষক সংকটের কারণে মান বাড়ছে না উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার। পরিকল্পনাহীন বিদ্যালয় স্থাপন ও বাণিজ্যিকীকরণের ফলে সমস্যা বাড়ছে মাধ্যমিক-প্রাথমিক শিক্ষায়ও। এতে চট্টগ্রামের শিক্ষাখাতে অবারিত সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’ বড় চ্যালেঞ্জ প্রশিক্ষিত শিক্ষকের স্বল্পতা

প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে দৈনিক পূর্বকোণের বিশেষ ক্রোড়পত্রের জন্য আয়োজিত ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম নগরী : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে আলোচকরা এসব কথা বলেন। আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে চট্টগ্রামের উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, প্রাথমিক, কিন্ডারগার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা নিয়ে মতামত দেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলেন, প্রতিবছর যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করছে, তাদের ভর্তির জন্য আসনের অভাব নেই। কিন্তু সবাই শহরের সরকারি কলেজে ভর্তি হতে চায়। অথচ টিচারদের ডেডিকেশন থাকায় পাহাড়ের কলেজও এখন ভালো করছে। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রশিক্ষিত শিক্ষকের স্বল্পতা।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত সরকারি বিদ্যালয় আছে। এরপরেও আমরা যেখানে সেখানে বিদ্যালয় করছি। একটির পাশে আরেকটি করছি। নীতিমালা মেনে নির্দিষ্ট দূরত্বে বিদ্যালয় করা উচিত। উপরে স্কুল-কলেজ, নিচে গার্মেন্টস; কেমন জানি একটা অবস্থা। শিক্ষা কি এত সস্তা জিনিস? শিক্ষা কখনও ব্যবসা হতে পারে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফ ইফতেখার মাহমুদ বলেন, ঢাকার বেসরকারি ইউনিভার্সিটিগুলো ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রে বেনিফিট পায়। কিন্তু চট্টগ্রাম শহরে ফুল ফ্যাসিলিটিজ নিয়ে একটা সুন্দর ক্যাম্পাস করা- ইট বিকামস ভেরি ডিফিকাল্ট। ঢাকায় ম্যাক্সিমাম ভালো ইউনিভার্সিটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। তারা এই এডভান্টেজটা পেয়েছে বসুন্ধরা হওয়ার পর।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে সেরকম লোকেশন আপনি পাবেন না। এক্ষেত্রে যারা চট্টগ্রামের মাস্টারপ্ল্যানার আছেন, তারা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা জোন করে দিতে পারেন। যেটা শহরে না হলেও খুব কাছে হবে। এছাড়াও ব্র্যান্ডিংয়ের ঘাটতি এবং চট্টগ্রামে ভালো জব মার্কেটের অভাব আছে। বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও চট্টগ্রামে ঢাকার মতো জব মার্কেট গড়ে উঠেনি।

দৈনিক পূর্বকোণের প্রধান প্রতিবেদক সাইফুল আলম বলেন, নর্থ সাউথ বা ব্র্যাক’র মতো প্রতিষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিপুল শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। চট্টগ্রামে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকলে তাদের টাকা সাশ্রয় হতো। কষ্ট কমতো। চট্টগ্রামে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে, কীভাবে উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়া যায় তা ঠিক করা দরকার। এতে চট্টগ্রাম উপকৃত হবে।

সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর ছয়টি শিক্ষা থানার অধীন স্কুলে শিক্ষার্থী আছে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২৫৬ জন। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৮৮ জন। শতভাগ উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই বিতরণসহ সরকারের ভিশনারি শিক্ষানীতি ভালো কাজ করছে। শিক্ষার্থী বাড়ছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন স্কুল প্রধান শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, আমাদের স্কুলে সাধারণত মধ্যবিত্ত এবং নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। সরকারি স্কুলের তুলনায় এখানে ভর্তি ফি বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কম ভর্তি হতে চায়। তারপরেও সরকারি স্কুলের সাথে তাল মিলিয়ে পড়ালেখার মান ধরে রাখার চেষ্টা করছি।

প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের উপাধ্যক্ষ মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কিছুটা লিমিটেড। কারণ এখানে পড়াশোনার খরচ বেশি। কম সংখ্যক মানুষ এই খরচ চালিয়ে পড়াশোনা করাতে পারে। এরপরেও দিন দিন শিক্ষার্থী বাড়ছে। এ শিক্ষা মাধ্যমের প্রসার হচ্ছে। তবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর রেগুলেটরি বডি প্রয়োজন। এটি হলে আরও ভালো হবে।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, আমরা যারা কিন্ডারগার্টেন নিয়ে কাজ করি তারা হলাম প্রতিষ্ঠাতা। আমরা আপনার সন্তানকে গড়ে তুলছি। কিন্ডারগার্টেনকে আরও কীভাবে মানসম্পন্ন করা যায়- সেটি দেখতে হবে। সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার সুযোগ দিতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর’র সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আমির উদ্দিনের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় আরও মতামত দেন নতুন শিক্ষাক্রমের মাস্টার ট্রেইনার আশীষ বরণ দেব, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি নুরুল হক সিদ্দিকী, অভিভাবক প্রতিনিধি মাসুদ খান। সমাপনী বক্তব্য রাখেন দৈনিক পূর্বকোণের সিটি এডিটর নওশের আলী খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *