বন্দরে দুইটি ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার উদ্বোধন
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে দুইটি ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার উদ্বোধন করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের ৪ নম্বর গেটে বসানো স্ক্যানার উদ্বোধন ও হস্তান্তর করেন তিনি। আরেকটি স্ক্যানার বসানো হয়েছে সিপিএআর গেটে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী এনবিআর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সব বন্দরে স্ক্যানার বসাতে হবে।
তাঁর আন্তরিকতায় অনেক স্ক্যানার বসানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর রপ্তানি পণ্যের জন্য দুইটি স্ক্যানার বসানোর খবর শুনে প্রধানমন্ত্রী খুশি হবেন। বন্দরের সঙ্গে কাস্টমসের বোঝাপড়ার অভাব ছিল। কয়েক বছরের অনেক সমস্যা তিন চার বছরেই সমাধান হয়েছে- এটা বড় প্রাপ্তি।
তিনি বলেন, দেশের ব্যবসায়ীরা সীমিত সময়ে মুনাফা লাভের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর হয়ে গেলে মেরিটাইম সেক্টরে আমরা অন্যরকম উচ্চতায় চলে যাব। বে-টার্মিনালে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহজ আসবে। ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। এর জন্য অবকাঠামো দরকার। প্রধানমন্ত্রী পায়রা বন্দর করেছেন, গভীর সমুদ্রবন্দর করেছেন। মেরিটাইম সেক্টরে আমরা সি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছে। ডেনমার্ক পায়রা বন্দরে বিনিয়োগ করতে চায়। সৌদি আরব আরও বিনিয়োগ করতে চায়। তারা মনে করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিরাপদ। দেশ বিক্রি করার চুক্তি আমরা কারও সঙ্গে করিনি, করবোও না। ডিজিটাল সিস্টেমে মানুষের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০৪১ সালে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়বো আমরা।
বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল।
নৌ সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বন্দরে স্ক্যানার বসাতে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই স্মার্ট গভর্ন্যান্স। এনবিআরের কাজে বন্দর সহযোগিতা করছে। ভবিষ্যতেও যদি সহযোগিতা দরকার হয় করা হবে।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর প্রথম শ্রেণির কেপিআই। বিশ্বের ১০০ শীর্ষ বন্দরে আমরা ৬৭তম। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা ও নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বন্দর এগিয়ে চলছে। প্রথমবারের মতো আধুনিক স্ক্যানার স্থাপন করেছি। বন্দরের পিসিটিতে সৌদিভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। বে টার্মিনালের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। স্ক্যানার দুইটি কাস্টম হাউস অপারেট করবে। এর ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রপ্তানি কনটেইনার জাহাজীকরণ সম্ভব হবে। বন্দরের নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তি বাড়বে।
প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোস্তফা আরিফুর রহমান খান জানান, বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ৮৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় সংগৃহীত এফএস৬০০০ মডেলের রেডিও একটিভ পোর্টাল মনিটর সমৃদ্ধ এ স্ক্যানার ঘণ্টায় ১৫০টি কনটেইনার স্ক্যান করতে পারে। ইস্পাতে এক্স-রে অনুপ্রবেশ ক্ষমতা ৩৩০ মিলিমিটার। ডুয়েল এনার্জির এ স্ক্যানার বোথওয়ে স্ক্যানে সক্ষম। উচ্চতর স্ক্যানিংয়েও এক্স-রে চিত্র অবিকৃত থাকে। জৈব, অজৈব ও মধ্যবর্তী উপাদান নির্দিষ্ট রঙে চিহ্নিত করে। ফলে আইজিএম বহির্ভূত পণ্য শনাক্ত করা যাবে। ট্রেইলার চালক সরাসরি স্ক্যানিং টানেলের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালাতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনটেইনার স্ক্যান হয়ে যায়। কনটেইনার নাম্বারও স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত হয় স্ক্যানারে। স্থাপন করা হয়েছে ৪টি ইমেজ মনিটরিং সেন্টার ও রিয়েল টাইম সিসিটিভি সিস্টেম।
এ প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয় ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। সর্বনিম্ন দরদাতা ফাইভ আর অ্যাসোসিয়েটের দরপত্র ওই বছরের ২৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। ১২ ডিসেম্বর কার্যাদেশ, ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি চুক্তি সম্পাদন এবং ২৭ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। আইএসপিএসের আলোকে বন্দরের সব রপ্তানি গেটে কনটেইনার স্ক্যানার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলো বন্দর কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এরিয়া কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল আজিম, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি খলিলুর রহমান, বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক, ফাইভ আর অ্যাসোসিয়েটসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ান জাহিদ রহমান, বন্দর সিবিএ নেতা নায়েবুর রহমান ফটিক।