বন্ধের পথে ফৌজদারহাট পাবলিক স্কুলের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দুই দশকের পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফৌজদারহাট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ।
সোমবার (১০ জুন) দুপুর ১টায় সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলাউদ্দিন সশরীরে উপস্থিত থেকে নার্সারি থেকে দশম পর্যন্ত সকল শ্রেণির বেঞ্চ-টেবিল, শিক্ষাসামগ্রী, কম্পিউটারসহ বিদ্যালয় ভবন থেকে সকল আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।
এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সুমল কান্তি দত্তের অভিযোগ সকাল ৮টা থেকে বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশে বাধা দেয় বিদ্যালয় ভবনটির নতুন মালিক দাবিদার মো. মহসিন ও তার লোকজন।
জানা যায়, দশ বছর আগে শিল্পপতি গিয়াস উদ্দিন কুসুমের মালিকানাধীন তুলাতলীস্থ পাঁচ তলা ভবন ভাড়া নেন পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর তারা মাসিক ৭০ হাজার টাকা হারে ভাড়া পরিশোধ করেন। প্রথমে গিয়াস উদ্দিন কুসুম পরবর্তীতে তার অবর্তমানে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্ত্রী আফসানা নূর জুলির কাছে ভাড়া পরিশোধ করা হয়। এরপর স্ত্রীর আর খোঁজ না পাওয়ায় ভাড়া পরিশোধ করতে পারেনি স্কুল কমিটি।
একই সাথে স্কুল কর্তৃপক্ষের অজান্তে ভবনটি বন্ধক রাখা হয় ন্যাশনাল ব্যাংক ভাটিয়ারী শাখায়। গিয়াস উদ্দিন কুসুম ঋণ খেলাপি হলে অন্যান্য সম্পত্তির সাথে এ ভবনটিও নিলামে ওঠে। নিলাম খরিদ করেন তুলাতলী এলাকারই বাসিন্দা ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন। রবিবার নিলামে পাওয়া জায়গা ও ভবন বুঝে নিতে অর্থঋণ আদালত ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে হাজির হন ব্যবসায়ী জাহেদ। অভিযানের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলাউদ্দিন।
এদিকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর বিদ্যাপীঠ এভাবে বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন অধ্যক্ষ সুমল কান্তি। দুপুর ২টায় যখন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে একে একে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার বেঞ্চ, শিক্ষাসামগ্রী দুমড়ে মুচড়ে বের করা হচ্ছিল তখন চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল তার। কোনোমতে হাতের ব্যাগটি নিয়ে বেরিয়ে যান দীর্ঘদিনের স্মৃতি বিজড়িত বিদ্যালয় থেকে। এ সময় তিনি বলেন, সকালে আমার ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেয় মহসিনের লোকজন। অথচ আজ দুই শিফটের বিদ্যালয়টিতে মূল্যায়ন পরীক্ষা চলছিল।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি আনোয়ার সিদ্দিকী চৌধুরী বলেন, আমাদেরকে কোন প্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়া বের করে দেয়া হয়েছে। ভবনের মালিকানা পরিবর্তন হতেই পারে কিন্তু সেটি আমাদের জানাতে হবে। যেহেতু এটি তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর একটি প্রতিষ্ঠান অবশ্যই স্কুল কর্তৃপক্ষকে আগাম নোটিশ এবং অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য নূন্যতম সময় দিতে হবে। কিন্তু কোন পক্ষই তা করেননি।
স্কুল ভবনটির নিলাম খরিদ মালিক জাহিদ হোসেনের ভাই মহসিন জানান, আরও নয় মাস আগে আমরা জায়গাটি নিলামে খরিদ করি। স্কুল কর্তৃপক্ষকে দফায় দফায় তাগাদা দিয়েছি কিন্তু তারা বিষয়টি কর্ণপাত করেননি। এখন আদালত জায়গাটি বুঝিয়ে দিচ্ছে। আমরা বুঝে পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিব।
তিনি বলেন, আমরা নিলাম পাওয়ার পর থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভাড়া দিলে আমরা সমঝোতা করতে পারতাম। কিন্তু কুসুম সাহেবের মত আমাদেরকেও ভাড়া না দিয়ে থাকার পাঁয়তারা করছিল তারা।
তবে এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ওসমান গনি মনসুর। তিনি বলেন, কেউ একজন নিজেকে ভবনের মালিক দাবি করলেই কি মালিক হয়ে যাবে। মহসিন সাহেবতো কখনও ভবনের মালিকানার কোন ডকুমেন্টস প্রদর্শন করতে পারেনি। আমরা নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করেছি। যার ডকুমেন্টসও আমাদের কাছে আছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলাউদ্দিন বলেন, আমি আদালতের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র। অগ্রিম নোটিশ দেয়া আমার কাজ নয়।