বাঁশখালীর প্রধান সড়ক: গতিরোধকে নেই রঙের চিহ্ন, ঘটছে দুর্ঘটনা
পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী (পিএবি সড়ক) সড়কের বাঁশখালী অংশে গতিরোধক চিহ্নে কোনো রঙ বা সাংকেতিক চিহ্ন না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। অপরিকল্পিতভাবে গতিরোধক তৈরি করায় ওই সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা নেই।
জানা যায়, তৈলারদ্বীপ সেতু থেকে বাঁশখালীর সীমান্তবর্তী পেকুয়া উপজেলার টেইটং পর্যন্ত প্রায় ৩৪ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে রয়েছে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি গতিরোধক। এরমধ্যে অভ্যন্তরীণ সড়কেও ব্যক্তি উদ্যোগে যত্রতত্র স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য গতিরোধক। গতিরোধকগুলোর আগে পরে নেই কোনো চিহ্ন। লেখা নেই কোনো সতর্কবাণী।
এমনকি রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়নি ওই গতিরোধকগুলো। কিছু কিছু গতিরোধক এতো উঁচু যে, এগুলোর উপর দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় বেশ জোরে ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়, যানবাহনের নিচের যন্ত্রাংশে গতিরোধক লেগে যায়। ফলে গতিরোধকের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে সাধারণ যানবাহন চালকরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, চালকদের সাথে যাত্রীদের কথা কাটাকাটি ও বাক-বিতণ্ডাও হচ্ছে।
বাসচালক আমিনুল হক বলেন, ‘স্কুল, মাদরাসা, মসজিদের সামনে গতিরোধক দরকার। তা ছাড়া সব গতিরোধক সাদা রঙ দিয়ে চিহ্নিত করে দিলে ভালো হতো। গাড়ি চলা অবস্থায় কিছু কিছু গতিরোধক বুঝা যায় না। নির্দিষ্ট জায়গায় গতিরোধক থাকলে যানবাহন চলাচলে সুবিধা হয়। আবার দূর থেকে আসা চালকরা রাস্তা অপরিচিত হওয়ার কারণে কোথায় গতিরোধক আছে তা বুঝতে পারেন না। এর ফলে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন।’
বেশ কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গাড়িভর্তি যাত্রী থাকলে গতিরোধক পার হওয়ার সময় ঝাঁকুনি লাগে। ওই সড়কে যাতায়াতকারী রোগী ও শিশুরা ঝাঁকুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে প্রসূতিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বাঁশখালী প্রধান সড়কে ৮ থেকে ১০টি বাজার বসে। আর হাট-বাজার, দোকান থেকে শুরু করে স্কুল, মাদরাসার সামনে অতি উঁচুতে গতিরোধক নির্মাণ এবং গতিরোধরে রঙ বা সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার না করায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেক সময় বিভিন্ন মাহফিল ও মসজিদ নির্মাণের নামে পাকা সড়কের ওপর ইট ও মাটি দিয়ে অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করে গাড়ির পথরোধ করার চেষ্টাও চলে।
ফয়েজ উল্লাহ নামের একজন মোটরসাইকেল চালক জানান, উঁচু গতিরোধকগুলোতে গাড়ির গতি কমিয়ে উঠার চেষ্টা করলে গাড়ি গতিরোধকের ওপর উঠতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে জোরে চালিয়ে উঠতে হয়। মাঝেমধ্যে ওই গতিরোধকগুলোতে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মোটরসাইকেল চালকরা। সড়কের বাঁকে মার্কিং বা সাইনবোর্ড সম্বলিত কোনো সাংকেতিক চিহ্ন নেই। যার দরুণ প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা হচ্ছে।
নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে খোদ প্রধান সড়কেই নয়, অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেই যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠেছে গতিরোধক। এ বিষয়ে একজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘সড়ক মেরামত করার সময় স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নিজ নিজ বাড়ির সামনে গতিরোধক দিতে বাধ্য করেন।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কারণে সড়কে যত্রতত্র গতিরোধক দিতে ঠিকাদাররা বাধ্য হন। জনস্বার্থে যেখানে গতিরোধক প্রয়োজন শুধু সেখানেই গতিরোধক থাকবে। বাকি সব গতিরোধক অপসারণ করা হবে। এবং গতিরোধকগুলোতে মার্কিং বা রঙ করার উদ্যোগ নেব।’