চট্টগ্রামবাঁশখালী

বাঁশখালীর সংরক্ষিত বনে বালু তুলে পরিবেশের ক্ষতি

পাহাড়ের পা ঘেঁষে বয়ে গেছে পুঁইছড়ি ছড়া। ছড়াটি সংরক্ষিত বনের আওতায় পড়লেও সেখানে ড্রেজার মেশিনের শব্দ, বালুর ট্রাক আসা যাওয়ার ব্যস্ত দৃশ্য দেখে মনে হবে এটি কোন বাণিজ্যিক বালু মহাল। পাহাড়ের গোড়া কেটে কেটে বালু তোলার ফলে ছড়াগুলো এখন রূপ নিয়েছে নদীর মত। যেন চোখের সামনে ধ্বংস হচ্ছে বিস্তীর্ণ পাহাড় ও সবুজ বন।

অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী মহলের বিশাল সিন্ডিকেট সংরক্ষিত বন ধবংস করছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। সবুজ বন পরিণত হয়েছে লালচে মরুভূমিতে। অথচ কর্তৃপক্ষের কোন ভূমিকা নেই।

মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, পুঁইছড়ি ইউপির পূর্ব পুঁইছুড়ি ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বহরা তলী এলাকায় অন্তত ৬-৭টি স্পট থেকে বালু তোলা হচ্ছে ড্রেজার মেশিন দিয়ে। প্রেমবাজার থেকে পূর্ব দিকে রওনা দিতেই দেখা যায়, পুরো ৩ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক। এ যেন বালুর হাট-বাজার। প্রতি ১০ মিনিটে একের পর এক বালুভর্তি ট্রাক আসছে আর যাচ্ছে। রাস্তা জুড়ে ধুলা আর ধুলা।

তোলার পর স্তূপ করে রাখা বালু
স্থানীয়রা বলেছেন, ‘২০২০ সালের এপ্রিল মাসে জঙ্গল পুঁইছড়ি বালুমহালের ইজারা বাতিল করে জেলা প্রশাসন। এর আগে ২০১৯ সালে স্থানীয় ঠিকাদার মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন ২২ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় জঙ্গল পুঁইছড়ি বালুমহাল ইজারা নিয়েছিলেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার অভিযোগের পর বালুমহালের ইজারা বাতিল করে দেওয়া হয়।’

‘এরপরও সংরক্ষিত এ বনাঞ্চল থেকে বন্ধ হয়নি বালু তোলা। বরং বেড়েছে। ফলে প্রভাবশালী চক্র সিন্ডিকেট গঠন করে প্রতিযোগিতামূলকভাবে পাহাড়ের টিলা ও ছড়া কেটে বালু এবং মাটি উত্তোলন করে যাচ্ছে। সাথে সাথে বনের গাছও কেটে সাবাড় করে ফেলছে ভূমিদস্যুরা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি অনুমোদনবিহীন ও অবৈধ পন্থায় বালু তোলার ফলে রাস্তাঘাট ও শত শত বছরের পাহাড়গুলো ধ্বংস হয়ে পড়ছে। পাহাড়গুলোতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে । ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে ফসলি জমি, জীববৈচিত্র্য, ঘর-বাড়ি, বসতভিটা, রাস্তা-ঘাটের ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশের বিপর্যয় হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেছেন, প্রতিদিন তারা ১০০-২০০ ট্রাক বালু বিক্রি করেন । ট্রাকযোগে বালুগুলো বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো দেওয়া হয়। প্রতি ট্রাক বালু ২৫০০ টাকা। এর বাইরে গাড়ির ভাড়া নির্ধারণ করা হয় স্থান বুঝে। আবার ঘরোয়া ক্রেতারা স্থানভেদে কিনছেন ৪-৮ হাজার টাকায়। পাহাড়ি এই ছড়ার বিভিন্ন স্থানে এখনও মজুদ রয়েছে অন্তত ১০-১৫ কোটি টাকার বালু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *