বাঁশখালীর সাবেক এমপি মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের মামলা
সাবেক সাংসদ ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন বাঁশখালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফকত হোসাইন চাটগামী। তিনি দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চের বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী (৪৫) বাদী হয়ে বাঁশখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। আদালত অভিযোগ গ্রহণ করে বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমদকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় সাবেক সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী মোশাররফ হোসাইন খাঁন।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ছিলেন সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী। বাদী শফকত চাটগামীর জনশক্তি কম থাকার সুযোগ নিয়ে আসামি মোস্তাফিজের স্বার্থে কাজ করার জন্য এজেন্ট নিয়োগের প্রস্তাব দেয়। অপরদিকে শফকত হোসাইন চাটগামীসহ সবাই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিলেও মোস্তাফিজ অজানা কারণে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে শফকত হোসাইন চাটগামীকে সাথে নিয়ে মোস্তাফিজ হাইকোর্টে মামলা করার প্রস্তাব দিলে তিনি সেই প্রস্তাব মেনে নেননি। শফকত হোসাইন চাটগামী ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মোস্তাফিজ তাকে তখন থেকে শত্রু ভাবতে শুরু করেন।
গত ২৯ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাঁশখালী উপজেলা সদরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বলেন, ‘সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বুঝাতে চেষ্টা করেছেন নিজের বাড়ি না করে সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করেছেন। অথচ এটি সম্পুর্ণ মিথ্যা ও ভণ্ডামি। দলীয় কার্যালয় নির্মাণে সাবেক এমপি ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছেন। খানখানাবাদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার ৭ লাখ টাকা, সাবেক চেয়ারম্যান বদরুদ্দীন চৌধুরী ৮ লাখ টাকা, চেয়ারম্যান ইবনে আমিন ৫ লাখ টাকা, পুকুরিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা মাহবু্ব আলী ১১ লাখ টাকা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব সাদলী ৩৪ লাখ টাকা দিয়ে অফিস সংলগ্ন ছড়ায় গাইড ওয়াল নির্মাণ করে দেন। এভাবে আরও বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন সাবেক এমপি মোস্তাফিজ।’
এই বক্তব্যের সূত্র ধরে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এর জের ধরে গত ৩০ জুন ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেন মোস্তাফিজ। এসময় মোস্তাফিজ ফোন করে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামীকে বলেন, ‘এগুলো কী লিখছস?’ জবাবে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী বলেন, ‘আমি তো নিজ থেকে কিছু বানিয়ে লিখি নাই। গফুর সাহেব মিটিংয়ে যা বলছে, তা লিখছি আর কি।’ এরপর মোস্তাফিজ বলেন, ‘তোর মায়ের… লিখছস খাং…পোলা। আমি আসতেছি। সু..নির পোলা… আমি ঢাকা থেকে আসলে তোর হাড্ডি-মাংস ভেঙে ফেলবো।’
বাদীর আইনজীবী মোশাররফ হোসাইন খাঁন বলেন, শুনানি শেষে আদালত মামলাটি গ্রহণ করে বাঁশখালী থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী বলেন, ‘আমাকে মুঠোফোনে হুমকি দিয়েও থেমে থাকেননি মোস্তাফিজ। বিভিন্ন অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে তার লোকজন দিয়ে আমাকে ফোন করাচ্ছেন। হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এমন অবস্থায় আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি আদালতের কাছে প্রতিকার চেয়েছি। আদালত আমার মামলা নিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি অধ্যাপক আবদুল গফুরের বক্তব্যের সূত্র ধরে আমি নিউজ করেছি। আরও বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজটি এসেছে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই বক্তব্যের লাইভ প্রচারিত হয়েছে। আমি তো একা নিউজ করিনি। মূলত জাতীয় নির্বাচনের সময় আমার কাছ থেকে এজেন্ট চেয়েছিল। আমার এজেন্টগুলো না দেওয়ায় তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত।’