চট্টগ্রামবাঁশখালী

বাঁশখালীর সেই ইউপি চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর সম্পদ জব্দের আদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী এবং তার স্ত্রী সাহেদা বেগম নূরীর অবৈধভাবে অর্জিত স্থাবর সম্পদ জব্দের (ক্রোক) আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ আদেশ কার্যকরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ২৮ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ থেকে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে আদালতের নির্দেশনা সম্বলিত পত্র পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ ড. জেবুন্নেছা এ ক্রোক আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত দুই আসামির অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেন।

এসব সম্পদের মধ্যে জমিজমার পাশাপাশি সিকদার ফিশারিজ এন্ড পোল্ট্রির নামে থাকা সম্পত্তিও রয়েছে। আদালত আসামি মুজিবুল হক চৌধুরীর অসাধু উপায়ে অর্জিত ৬৭ লাখ ১৩ হাজার ৫৯১ টাকা এবং তার স্ত্রী সাহেদা বেগম নূরীর অর্জিত ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ৬২২ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন।

দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, ‘মুজিবুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী সাহেদা বেগম নুরীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি মামলা হয়। ওই মামলার তদন্তে পাওয়া আসামিদের সম্পদ ক্রোকের জন্য গত ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ জজ আদালতে আবেদন করি। এরপর গত ২৫ জুলাই আদালত দুই আসামি মুজিবুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী সাহেদা বেগম নূরীর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন।’

এর আগে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক বাদী হয়ে পূর্ব চাম্বল এলাকার আবদুল গফুর সিকদার বাড়ির মৃত মোজাম্মেল হক চৌধুরীর ছেলে মুজিবুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী সাহেদা বেগম নূরীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মুজিবুল হক চৌধুরী জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫৬ লাখ ৭১ হাজার ১৪ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর অর্জন করে ভোগদখলে রেখেছেন।

এটি দুদক আইনের ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপর মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মুজিবুলের স্ত্রী সাহেদা বেগম নূরী জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৮৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ টাকার সম্পদ উপার্জন করে ভোগদখলে রেখেছেন। এটি দুদক আইনের ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দ্বিতীয় মামলায় স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদ উপার্জনে সহযোগিতা করায় মুজিবুল হক চৌধুরী বিরুদ্ধে দন্ড বিধি ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২-এর উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম বলেন, ‘ মুজিবুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী সাহেদা বেগম নুরীর অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ ক্রোকের আদেশের পর আদালতের নির্দেশনাসংবলিত চিঠি পাঠানো হয়েছে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার, ভূমি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার সম্পদ জব্দের বিষয়ে অবগত হয়েছি। আমার কেনা জমিগুলো যাচাই-বাছাই না করে আয়বহির্ভূত বলে রায় দিয়েছে। আমি আইনজীবীর মাধ্যমে আইনগতভাবে লড়েছি। এরপরও কিছু হয়নি।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৬ নভেম্বর মুজিবুল হক প্রকাশ্য জনসভায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে হুমকি দেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মুজিবুল হকের এই বক্তব্যকে ‘সহিংস বক্তব্য’ হিসেবে উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *