বাঁশখালী-আনোয়ারায় বেড়িবাঁধ সংস্কারে ৮৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প
চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারে ৮৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গত ২৮ মে এই প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। ৮৭৪ কোটি টাকার মধ্যে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বাঁশখালী অংশের জন্য।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বাঁশখালী উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সাড়ে ৭ বছর আগে ২৫১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০১৫ সালের ১৯ মে প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ার পর বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধ নির্মাণে কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বেড়ে হয়েছিল ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় এতে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণ, ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করার কথা রয়েছে। ২০২২ সালে প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়।
এই বিষয়ে বাঁশখালীর সাংসদ মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, আমি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বেশ কয়েকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে প্রকল্পটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে নেয়ার ব্যবস্থা করি। বাঁশখালীর পার্শ্ববর্তী উপজেলা আনোয়ারার সন্তান অর্থ-প্রতিমন্ত্রী প্রকল্পটি অনুমোদনে শুরু থেকেই সক্রিয় হন। তিনি প্রকল্পটি যাতে দ্রুত অনুমোদন পায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন। এই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হলে আনোয়ারা-বাঁশখালী উপকূল হবে নতুন অর্থনৈতিক হাব।
উল্লেখ্য, পশ্চিম বাঁশখালীর মানুষের প্রাণের দাবি একটি টেকসই বেড়িবাঁধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছিল না কোন ভাবেই। ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধটি সাগরের বুকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে খড়কুটোর মতই।
উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকায় বলতে গেলে সাগর বক্ষে দিনে দিনে মিলিয়ে যাচ্ছে এই বেড়িবাঁধ। এই বেড়িবাঁধের কারণে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। ঘূর্ণিঝড় আয়লা, সিডর, কোমেন, রোয়ানুর কবলে পড়ে প্লাবিত হয়ে শত শত একর ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে। চলতি বছর দেখা যায় ব্যাপক এলাকা চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ব্লক তৈরী, লুটপাট ও ব্যাপক দুর্নীতিতে এর বাজেট যা ছিল তা কেবল ছোট থেকে ছোট হয়ে এসেছে। এসব ঢাকতে অপরিকল্পিত নকশা প্রণয়ন ও যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কারণেই মাত্র এক বছরের মাথায় হারিয়ে যাচ্ছে সাগর বক্ষে। অনেকের মতে সাম্প্রতিক সময়ে সাঙ্গু নদীর মোহনায় জেগে উঠা চর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়ায় তা সরাসরি আঘাত হানছে বেড়িবাঁধের উপর। ফলে বাঁধের কিনারেই তৈরি হচ্ছে ৬০ ফুট গভীরের খাড়ি (কূপ)। যা ক্রমশ বেড়িবাঁধের ভিতকে নড়েবড়ে করে দিয়ে ভাঙন ত্বরান্বিত করছে। যদিও বেশিরভাগ স্থানীয়রা এই যুক্তি মানতে নারাজ, তাদের দাবি এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগের। তারা এটার সম্ভাব্যতা যাচাই না করে ধর তক্তা মার পেরেক টাইপের কাজ কেন করবে এবং তার খেসারত কেন উপকূলবাসী দেবে সেই প্রশ্ন জনতার।
সরেজমিনে দেখা যায়, খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া এলাকার মধ্যবর্তী দুটি স্থানে ধ্বসে গিয়ে বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ অংশ সাগরে মিলিয়ে গেছে। সিসি ব্লক বেষ্টিত বাঁধের যেটুকু ঠিকে আছে তাতে বিশালাকার ফাটল সৃষ্টি হয়ে নিচের দিকে ক্রমশ দেবে যাচ্ছে। জোয়ারের পানি বেশি এলেই পুরোপুরি মিশে যাবে বেড়িবাঁধের এই অংশটুকু।
পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর বলেন, বাঁশখালী-আনোয়ারায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় নেওয়া ৮৭৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে। এ প্রকল্পে প্রায় পৌনে ৬০০ কোটি টাকার কাজ হবে বাঁশখালীতে। বাকি কাজ হবে আনোয়ারা উপকূলে। প্রকল্পটি উপকূলের বেড়িবাঁধ রক্ষায় কার্যকর হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে লবণ, মৎস্য ও কৃষিপণ্য চাষে আমূল পরিবর্তন ঘটবে।