দেশজুড়েশিক্ষা

বাগাতিপাড়ায় একসঙ্গে এসএসসি পাস করলেন দুই নারী জনপ্রতিনিধি

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কারিগরি (ভোকেশনাল) শাখা থেকে একই কেন্দ্রে অংশ নেওয়া সাবেক-বর্তমান তিন নারী জনপ্রতিনিধির মধ্যে দুইজন সফলতার সঙ্গে পাস করেছেন। পাসের খবরে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন তারা।

এছাড়া তারা প্রমাণ করেছেন, বয়স নয়, ইচ্ছেশক্তি আর প্রচেষ্টা থাকলে সফলতা আসবেই। শুধু তাই নয়, জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন হয়, তা তারা উপলব্ধি করেছেন।

রোববার (১২ মে) সারা দেশে একযোগে এসএসসি, দাখিল ও কারিগরি শাখার পরীক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করে সব শিক্ষা বোর্ড।

বাগাতিপাড়া উপজেলায় পাস করা দুই জনপ্রতিনিধি হলেন-পাকা ইউনিয়ন পরিষদের ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছা. শিলা খাতুন (৩০) ও একই ইউনিয়নের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছা. শাহানাজ পারভীন (৩২)।

অপরদিকে কৃতকার্য হতে না পারা অপরজন হলেন বাগাতিপাড়া পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মুর্শিদা বেগম (৪৩)। তারা বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন ট্রেডের পরীক্ষার্থী শিলা খাতুন জিপিএ-৪ দশমিক ২৯ এবং ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেডের পরীক্ষার্থী শাহানাজ পারভীন জিপিএ-৪ দশমিক ১১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে অসুস্থতার কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকায় কৃতকার্য হতে পারেননি আরেক জনপ্রতিনিধি মুর্শিদা বেগম।

ইউপি সদস্য শিলা খাতুন জানান, অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পরিবার থেকে তাকে বিয়ে দেওয়ায় লেখাপড়া করার আক্ষেপটা রয়ে যায়। ভোটে বিজয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণায় তিনি আবার লেখাপড়া শুরু করেন। অবশেষে এবার এসএসসি পাস করায় তিনি খুবই আনন্দিত। তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চান।

সাবেক ইউপি সদস্য শাহানাজ পারভীন বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে দেয় তার পরিবার। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা থেকেই দীর্ঘসময় পর কারিগরি শাখায় ভর্তি হয়েছিলেন। এসএসসি পাস করায় তিনি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সবার দোয়া চান। তিনি আরও বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সফলতার সঙ্গে পাস করেছি। এরপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা চালিয়ে যাবো।

কৃতকার্য হতে না পারা মহিলা কাউন্সিলর মুর্শিদা বেগম (৪৩) জানান, পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোই ছিল। তবে অসুস্থতার কারণে একটি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন। এজন্য তিনি এবারের পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। কিন্তু আগামীতে আবারও পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তিনি।

বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বি এম ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সামসুন্নাহার বলেন, বয়সের বাধাকে উপেক্ষা করে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দুই নারী জনপ্রতিনিধি পাস করেছে, এটা আনন্দের ব্যাপার। আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। এছাড়াও যিনি পাস করতে পারেননি, তিনিও যাতে আগামী বছর পাস করতে পারেন তার জন্য শুভ কামনা রইলো। বয়স আর লোকলজ্জাকে উপেক্ষা করে তারা যে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন এটা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে সফল হয়েছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *