দেশজুড়ে

বাগেরহাটে রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ সড়ক হয়নি সংস্কার, জনদুর্ভোগ

বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ৪০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক এখনও সংস্কার হয়নি। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে জনদুর্ভোগও।

শুধু সড়ক নয়, কাঠের পোল, কালভার্ট, সেতুসহ গ্রামীণ অবকাঠামোর ১২০টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড় শেষ হওয়ার ২৫ দিন পরেও সংস্কারকাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে জলোচ্ছ্বাসে সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও কোথাও ইটের সলিংয়ের একাধিক স্থানে ভেঙে সমতল জমির সঙ্গে মিশে গেছে। আবার কোথাও গ্রামীণ সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া সেতু, কাঠের পোল, কালভার্টসহ শতাধিক স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে স্কুলগামী শিক্ষর্থীরা। বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও বাগেরহাট সদরে যাতায়াতে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে পথচারী ও এলাকাবাসী। স্থানীয় ব্যবস্থায় সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছে অনেকে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ঘষিয়াখালী এলাকায় দেখা যায়, প্রধান সড়কটি কয়েক জায়গায় ভেঙে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে অনেক জায়গা। ইটের সলিংয়ের ইটও বিলীন হয়েছে নদী ও খালে।

ঘষিয়াখালী এলাকার আব্দুস সত্তার বলেন, ঝড়ে রাস্তাটি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৫-২৬ দিন হয়ে গেল এখনও সংস্কারের উদ্যোগ নেই। কী যে ভোগান্তিতে পড়েছি তা বলে বোঝানো যাবে না।

একই উপজেলার খাউলিয়া গ্রামের আমজাদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ঝড়ের কারণে জলোচ্ছ্বাসে আমাদের এলাকার সব রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। চলাচল করতে পারছি না। পোলগুলো ভেঙে গেছে। এছাড়া সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। রাস্তাঘাট মেরামত না করলে কোথাও যেতে পারবো না।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মনিরুল হক তালুকদার বলেন, এবারের ঝড়ে এত ক্ষতি কোনোদিন হয়নি। জলোচ্ছ্বাসে এলজিইডির কার্পেটিং ও ইটের সলিংয়ের রাস্তাঘাট একাধিক স্থানে ভেঙে সমতল জমির সঙ্গে মিশে গেছে। গ্রামের রাস্তাঘাট চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লোকালয়ের লবণাক্ত পানি ঢুকে সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে পুকুর, ডোবা ও খালবিলের পানি কালচে আকার ধারণ করায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। রান্না, গোসল করাসহ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবাহিত ডায়রিয়া ও চর্ম রোগসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে উপকূলবাসী।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান বলেন, ঘূণিঝড়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রাস্তাঘাটসহ নানা অবকাঠামোর ক্ষতি নিরূপণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বাগেরহাট জেলার ৪০০ কিলোমিটার রাস্তা ও কাঠের পোল, কালভার্ড, সেতুসহ ১২০টি স্থাপনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ খালিদ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও কাঠের পোল, কালভার্ট, সেতুসহ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় এবার ঘূর্ণিঝড় রিমালে ৬৪৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে ক্ষতিপূরণ পাঠানো হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *