চট্টগ্রাম

বাণিজ্যিক থাবায় ম্লান পতেঙ্গা সৈকতের সৌন্দর্য

বাণিজ্যিক থাবায় ম্লান পতেঙ্গা সৈকতের সৌন্দর্য

পতেঙ্গা সৈকতের সৌন্দর্য গিলে খাচ্ছে দুই শতাধিক খাবারের দোকান। সাগর পাড়ের সৌন্দর্যবর্ধনে লাগানো গাছ ও বাগান নষ্ট করেই তৈরি করা হয়েছে এসব অস্থায়ী দোকান। খাবারের দোকান ছাড়াও ঝিনুক, মালাই চা, কসমেটিকস এবং অন্যান্য আরো শতাধিক দোকান রয়েছে। এছাড়াও সৈকতের পশ্চিম পাশে রয়েছে ৮-১০টি নাগরদোলা, বিচ বাইক, ঘোড়াসহ বিনোদনের আরো কয়েকটি উপাদান। এসব ঘিরে পতেঙ্গা বিচ এলাকায় দৈনিক লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয় বলে জানা গেছে।

গত রবিবার বিকেল ৪টার দিকে সৈকত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার পতেঙ্গা সৈকতের অধিকাংশ জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকান। সেখানে পর্যটকদের হাঁটার পথটুকুও সংকীর্ণ হয়ে গেছে। পর্যটকদের বসার জন্য বানানো রঙিন ব্লকগুলো খাবারের অস্থায়ী দোকানে ঢাকা পড়েছে। বাগানের স্থানেও গড়ে উঠেছে দোকান। পুরো পতেঙ্গা সৈকত যেন দোকানদারদের কবলে।

পর্যটকদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে দোকান নির্মাণের কারণে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য ম্লান হচ্ছে। জোয়ারের সময় পানির কারণে ওয়াকওয়ে থেকে চরে নামার সুযোগ নেই। খাবারের দোকান এবং তাদের টেবিল ও ছাতার কারণে ওয়াকওয়ে থেকে সমুদ্র দেখার সুযোগও নেই। সিডিএ’র উদাসীনতায় পতেঙ্গার মত একটি উন্মুক্ত জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করতে পেরেছে দখলদাররা।

হালিশহর থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদ বলেন, একটু দাঁড়িয়ে যে সাগরের ঢেউ আর বাতাস উপভোগ করবো সেই সুযোগও রাখেনি অবৈধ দোকানদাররা। পুরো পতেঙ্গা সৈকত যেন তারা দখল করে রেখেছে। আর যাদের এসব দেখভাল করার কথা, সেই সিডিএ’ও কেন নিশ্চুপ তা বুঝতেছি না।

দোকানদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খাবারের দোকানগুলোর ভাড়া দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। যা মাসে ১৫ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকা। এর বাইরে দোকান চুক্তি বাবদ এককালীন দিতে হয় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। ঝিনুক, চা দোকানসহ অন্যান্য দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী এবং দখলদাররা এসব দোকান দখল করে ভাড়া দিয়ে থাকেন।

বিভিন্ন দোকানদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হকার ক্যামেরাম্যান শ্রমজীবী সমবায় লিমিটেডের সাংগঠনিক সম্পাদক পতেঙ্গা সৈকতের ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা তুলেন।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হকার ক্যামেরাম্যান শ্রমজীবী সমবায় লিমিটেডের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদ বলেন, এখানে ২১০টি খাবারের দোকান রয়েছে, প্রতিটি দোকান দৈনিক ২০ টাকা করে চাঁদা দেয়। যা আমরা সিকিউরিটি ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বেতন বাবদ খরচ করি। আর যে টাকা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে আমাদের সমিতির বা এলাকার গরিব মানুষকে সহায়তা করে থাকি।

গাছ কেটে ও বাগান নষ্ট করে দোকান নির্মাণের কথা জানতে চাইলে এ হকার নেতা বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও লবণাক্ত পানির কারণে সিডিএ’র লাগানো গাছ ও বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা কেউ নষ্ট করিনি। রবং আমাদের সমিতি থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ২ হাজার গাছ লাগিয়েছি।

জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী ও আউটার রিং রোডের প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস্ধসঢ়; বলেন, পতেঙ্গা সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। চট্টগ্রামবাসীর বিনোদনের স্থানে যারা অবৈধ দোকান নির্মাণ করেছে, তাদের শীঘ্রই উচ্ছেদ করা হবে। উচ্ছেদের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। শীঘ্রই আমরা উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে পতেঙ্গা সৈকতে আগের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনবো।

উল্লেখ্য, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ২০০৫ সাল থেকে পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে। দুই বার সংশোধনের পর ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গায় সাগরপাড়ে ৫ কি.মি. এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটনকেন্দ্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *