দেশজুড়ে

বানভাসীদের জন্য ভালোবাসা

‘পরের কারণে স্বার্থে দিয়া বলি/এ জীবন মন সকলি দাও,

তার মত সুখ কোথাও কি আছে?/আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’

আজ থেকে ১৪৪ বছর আগে কবিতার এই পংক্তিগুলো লিখেছিলেন কামিনী রায়। তিনি সেই কবিতার নাম দিয়েছিলেন ‘সুখ’। যুগে যুগে তাঁর এই কবিতার প্রতিটি শব্দ নতুন করে ধরা দেয় যেকোনো মানবিক বিপর্যয়ে। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে মানুষের পাশেই দাঁড়াতে চায় আরেক মানুষ।

ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে দেশের ১২ জেলা। আর ফেনী নদী ও হালদার বাঁধ উপচে গত ২২ আগস্ট রাতে প্লাবিত হয় চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, মিরসরাই, রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। এসব জায়গায় হাঁটু থেকে কোমরসম বন্যার পানিতে তলিয়েছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।

তাঁদের পাশে দাঁড়াতে শহর থেকে ছুটে গেছেন চট্টগ্রামের একদল তরুণ-তরুণী। যাদের মধ্যে রয়েছেন তরুণ সাংবাদিক শুভ্রজিৎ বড়ুয়া, রবিউল রবি, ইমরান চৌধুরী ও আবু রায়হান তানিন। পেশাগত কাজের সুবাদে বন্যাপীড়িত মানুষের দুঃখ দুর্দশা ছুঁয়ে গেছে তাঁদেরও। সেই দায়বদ্ধতা থেকে এসব তরুণ তহবিল গঠনের মাধ্যমে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আবৃত্তিশিল্পী ও সমাজকর্মী শারমিন মোর্শেদ এবং তাঁর মেয়ে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৯’ মুকুট জয়ী রাফাহ নানজিবা তোরসা।

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে এই দলের সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছেন তাহমিদ তুরাজ, সানি, নিদি, সানজিদা মাহিন, জসিম উদ্দিন, রেজাউল করিম, এবং মোর্শেদ আলম নামের তরুণরা। শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে ‘ভালোবাসার উপহার’ নিয়ে তাঁরা ছুটে গেছেন ফটিকছড়ির ভুজপুর এলাকার বাগানবাজার এলাকার অলি-গলিতে।

সাংবাদিক রবিউল রবি বলেন, ‘পেশাগত কাজের সুবাদে প্রতিদিনই আমাদের কারও না কারও সুখ দুঃখের গল্প লিখতে হয়। যেকোনো মানবিক বিপর্যয়ে আমরা সাধ্যমতো পাশে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু এবারের আকস্মিক বন্যাটা ভয়ংকর ছিল। নিজ চোখে মানুষের দুঃখ দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি। একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদে সকলের সহযোগিতা চেয়েছি। খুব অল্প সময়ে আমরা চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে।’

সাংবাদিক শুভ্রজিৎ বড়ুয়ার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা দেড়শর বেশি পরিবারের জন্য শুভেচ্ছা উপহার নিয়ে সকালে রওনা হয়েছি। আমাদের গন্তব্য ফটিকছড়ির বাগান বাজার ও মিরসরাইয়ের করেরহাট। এরপরও উপজেলা প্রশাসন এবং আমাদের আগে যারা পৌঁছেছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা কাজ করবো।’

প্রসঙ্গত, উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে ১২টি জেলা বন্যাকবলিত। এগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ফেনী জেলার। এমনকি শহরের সঙ্গে ছয় উপজেলার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ ও মুঠোফোন নেটওয়ার্ক না থাকায় সেখানকার মানুষের অবস্থার খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এসব জেলায় প্রায় ৯ লাখ পরিবার পানিবন্দী। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। বন্যায় তিন দিনে এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার তিন উপজেলায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া গত ২২ আগস্ট রাতে হালদা নদীর বাঁধ উপচে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলা বন্যাকবলিত হয়। এই বন্যায় হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি ফটিকছড়ির কাজিরহাট, নাজিরহাট, বারমাসিয়া, নারায়ণহাট, সুন্দরপুরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। যদিও এই উপজেলার বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে।তবে পাইন্দং, ভুজপুর, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি, সমিতির হাট, ভক্তপুরসহ আশেপাশের ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত আছে।

অন্যদিকে ফেনী নদী ও মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মিরসরাই উপজেলাও প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে এ উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একইসাথে এই বন্যায় রা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *