বিচারক নেই দুই মাস, দুর্নীতির মামলায় জট
চট্টগ্রামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রম থমকে আছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে বিচারক না থাকায় এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে প্রসিকিউশন থেকে শুরু করে বাদী, সাক্ষী, এমনকি আসামিপক্ষও।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা নিয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত। দুদকের মামলাগুলোর একমাত্র বিচারিক কার্যক্রম চলে এই আদালতে। গত ২১ মার্চ চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ বদলি হন। এরপর আর এগোয়নি বিচার কার্যক্রম। বর্তমানে আদালতের এজলাস খোলা থাকলেও কর্মচারীদের বেশির ভাগ অলস সময় পার করছেন।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ সালে দীর্ঘদিন বিচারক ছিলেন না এই আদালতে। পরে ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে যোগ দেন। গত ২১ মার্চ তিনি বদলি হন।
আদালতের নথি সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই আদালতে দুদকের ৩২৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় বিচারপ্রক্রিয়া চলা মামলার সংখ্যা ৮৭। সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদক আরও একাধিক মামলা করেছে। সর্বশেষ গত ২০ মে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সাবেক এক কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রী এবং ৩০ মে বাঁশখালী উপজেলার সাবেক এক পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। কিন্তু আদালত না বসায় মামলার কার্যক্রম এগোচ্ছে না।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, আয়কর ফাঁকি ও দুর্নীতি লুকাতে সম্পদের তথ্যে গরমিল, ঘুষ গ্রহণ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, কেনাকাটায় দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এ ছাড়া মাদক ও অস্ত্রের আড়াই শ মামলাও এই আদালতে বিচারাধীন।
আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ২১ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত আদালতে ৪৩ কার্যদিবসে ৯ শতাধিক মামলার তারিখ ধার্য ছিল।
কক্সবাজারে (উখিয়া-টেকনাফ আসন) সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. আসলাম চৌধুরীসহ পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা, শিপিং ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার তারিখও এই সময়ের মধ্যে ছিল। সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ, যুক্তিতর্ক, চার্জ গঠন ও শুনানির জন্য ধার্য থাকা এসব মামলার তারিখ পড়লেও বিচারক না থাকায় মামলার কার্যক্রম চলেনি।
দুদকের পিপি মাহমুদুল হক বলেন, বিচার না থাকলে কিংবা মামলার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা থাকলে স্বাভাবিকভাবে মামলার মেরিট নষ্ট হয়ে যায়। বিচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া মামলার বাদী, সাক্ষী ও প্রসিকিউশন—সবাই ভোগান্তিতে পড়ে। এতে অপরাধীরা সুযোগ-সুবিধা পায়। এই আদালতে বিচারাধীন দুদকের সব মামলাই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি।
দুদকের আরেক কৌঁসুলি কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা আছে, যেগুলোর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে আছে। কিন্তু বিচারক না থাকায় নির্ধারিত তারিখে মামলার কার্যক্রম শেষ করা যাচ্ছে না। এর আগেও গুরুত্বপূর্ণ এই আদালত দীর্ঘ সময় ধরে বিচারকশূন্য ছিল। আমরা চাইব অতি দ্রুত একজন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে বিচারক বদলির আগেই যেন নতুন বিচারক এই আদালতে নিয়োগ দেওয়া হয়।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিতে ভরা। অন্ধকারের মধ্যে ছোট একটা মোমবাতি হলো দুদক। যাঁরা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করছেন, দুদক তাঁদের ধরে বিচারের জন্য পাঠাচ্ছে। কিন্তু যেখানে বিচারিক কার্যক্রম চলে, সেখানে বিচারক নেই।
আখতার কবির চৌধুরী আরও বলেন, চট্টগ্রামে সেশন জজকোর্ট, নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল, সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালসহ আরও কয়েকটি আদালতের বিচারকদের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কেন এই আদালতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের তো অনেকের সময় রয়েছে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য। এটাও করা হচ্ছে না।