বিপ্লব উদ্যানে স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন
চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেটে অবস্থিত বিপ্লব উদ্যানের পরিবেশ ধ্বংস করে নতুন স্থাপনা নির্মার্ণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিপ্লব উদ্যান দোকান মালিক সমিতি। বুধবার (১৪ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে বিপ্লব উদ্যানের সামনে মানববন্ধন করে সংগঠনটি।
এ সময় বক্তারা বলেন, আমরা আগেও একবার মানববন্ধন করেছিলাম। উনারা (চসিক) আমাদের কথা রাখেন নাই। এখানে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা আছে তারপরও চসিক নতুন স্থাপনা নিমার্ণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসার জায়গায় ব্যবসা করেন কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু প্রকৃতি নষ্ট করে কোনো ব্যবসা করা যাবে না। এই পার্ক সিটি কর্পোরেশনের একার সম্পত্তি নয়, এটা জনগণেরও পার্ক। এই পার্কের সুবিধা নগরবাসীই একমাত্র প্রাপ্য। নগরবাসীকে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে এই পার্কে একেক সময় একেক স্থাপনা গড়া হবে এটা হতে দেওয়া যায় না। ঢাকার যে কন্ট্রাকটর কী পরিমাণ গাছ কাটছে তা যাতে আবার লাগানোর ব্যবস্থা করা হয় সে ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিপ্লব উদ্যান দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, ‘আমরা সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ জানাই অতিসত্বর এই পার্কের নতুন স্থাপনা অপসারণ করে উদ্যানটিকে পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যেতে। নতুন স্থাপনা নিমার্ণ না করতে মহামান্য হাইকোর্টের রায় থাকার পরেও সিটি কর্পোরেশন কেন কালক্ষেপন করছেন আমাদের বোধগম্য নয়। চট্টগ্রামবাসীর নাগরিক সুবিধার কথা চিন্তা করে এই পার্কটিকে আবার অবমুক্ত করা হোক এবং মেয়র রেজাউল করিম সাহেব যে চুক্তি করেছেন তা বাতিল করার অনুরোধ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত একটা বছর এই পার্কের যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছেন তারা যে কত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখেন না। চট্টগ্রামে এমনিতেই সবুজের পরিমাণ কম। তাই বিপ্লব উদ্যানে দোকান দিয়ে আমরা নিজেরাই বিব্রত। একটা নগরকে বেঁচে থাকতে হলে একটা পার্কের কতখানি প্রয়োজন আমরা সবাই জানি। দলমত সবকিছুর ঊর্ধ্বে এই পার্কটিকে কীভাবে বাঁচানো যায় নেই লক্ষ্যে অবিচল থাকবো।’
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম দুই নম্বর গেটে গাছগাছালিতে ভরা দুই একরের এই উদ্যান গড়ে তোলা হয়। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, উদ্যানে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের বেশি কংক্রিট অবকাঠামো থাকতে পারবে না। আর আন্তর্জাতিকভাবে ২ শতাংশও অনুমোদন করে না। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানের কংক্রিট অবকাঠামোর পরিমাণ অন্তত ৫৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থীর করা জরিপে উদ্যানের এই দশা জানা যায়। এখন সেখানে আবার স্থাপনা করা হলে উদ্যানে উন্মুক্ত পরিসর ও সবুজ পরিবেশ বলে কিছুই থাকবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধন ও বিনিয়োগ নিয়ে রিফর্ম কনসোর্টিয়াম নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি হয় সিটি করপোরেশনের। এর আগে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ২০ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়েছিল রিফর্ম ও স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। পাঁচ বছরের মধ্যে পুরোনো চুক্তি সংশোধন করে নতুনভাবে করা হয়। অবশ্য নতুন চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড। শুধু রিফর্ম কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি হয়।
অন্যদিকে, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করার কারণে ২০২০ সালের অক্টোবরে দোতলার স্থাপনা ভেঙে দিয়েছিলেন সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। ওই সময় উদ্যানে স্থাপন করা বসার আসনের একটি সারিও অপসারণ করা হয়েছিল। তবে নতুন চুক্তি অনুযায়ী, বিপ্লব উদ্যানে এখন থেকে স্থাপন করা যাবে বিলবোর্ড। আয়োজন করা যাবে মেলা বা উৎসব। এ ছাড়া ২০১৮ সালে সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব পাওয়া দুটি প্রতিষ্ঠান উদ্যানের পূর্ব পাশে দোতলা ভবন নির্মাণ করেছিল। নিচতলায় খাবার দোকান করা হয়। ওপরেও একই ধরনের দোকান করার কথা ছিল।