বিমান বিধ্বংসী কামান বসিয়েছে জলদস্যুরা
বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে বিমান বিধ্বংসী কামান বসিয়েছে জলদস্যুরা। যদিও বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিক, কমান্ডো অপারেশনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় ইউরোপ ও ভারতের যুদ্ধজাহাজগুলো নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছে। ফলে, নাবিকদের ব্রিজে রাখার বিষয়ে নমনীয় হয়েছে ওরা। তবে সপ্তাহে দুবার করে সুপেয় পানি দেওয়া হচ্ছে। তাও সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা করে।
সোমবার (২৫ মার্চ) রাতে এক ফেসবুক পোস্টে এসব তথ্য জানান মার্চের নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান। জিম্মি হওয়ার পর থেকে নাবিকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি।
জাহাজে বিমান বিধ্বংসী কামান বসানোর সত্যতা দাবি করে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিক কমান্ডো অপারেশনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় ইউরোপ-ভারতের যুদ্ধজাহাজগুলো আপাতত এমভি আবদুল্লাহর সাথে দূরত্ব বজায় রাখছে। দিনে হয়তো এক-দুইবার হেলিকপ্টার এসে রাউন্ড দিয়ে যায়, এতটুকুই৷ জাহাজে জলদস্যুরা সম্প্রতি একটা বিমান বিধ্বংসী কামান বসিয়েছে, তথ্যটা ঠিক।’
‘নেভি যুদ্ধজাহাজ দূরত্ব বজায় রাখায় নাবিকদের আর ২৪ ঘণ্টা ব্রিজে থাকা বাধ্যতামূলক না। ওদের নির্দেশনা অনুযায়ী একোমোডেশনে (বাসস্থান) যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছে। জাহাজে শুধুই জরুরি রুটিন কাজগুলো করার সুযোগ পাচ্ছেন নাবিকরা, বিশেষ করে ইঞ্জিন রুমে। কার্গো হোল্ডের কয়লার পরিবেশ নিরাপদ আছে।’
তিনি বলেন, ‘নাবিকদের খাবার আর পানির রেশনিং চলছে যেন এই মজুদে বেশিদিন যায়৷ খাবার বলতে ইফতারে চনাবুট, পিঁয়াজু, দুই রকম ফল আর সেহেরিতে ভাত দিয়ে ন্যুনতম মাছ-মাংস বা তরকারি।’
অনেকের ত্বকে এলার্জি দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাদু পানির লাইন চালু হচ্ছে সপ্তাহে মাত্র দুবার, তাও মাত্র একঘণ্টা করে। এই পুরো সপ্তাহে দুই ঘণ্টার মধ্যেই গোসল আর কাপড় ধুয়ে নিতে হয়৷ বাকি ১৬৬ ঘণ্টা ম্যানেজ করতে হয় সমুদ্রের নোনা পানির সাপ্লাই দিয়ে। এজন্য অনেকেরই ত্বকের এলার্জি দেখা দিয়েছে।’
‘স্যাটেলাইট ফোন সপ্তাহে মাত্র একবার ব্যবহারে অনুমতি দিচ্ছে জলদস্যুরা৷ গত শুক্রবার ছিল সেইদিন৷ জাহাজে আনুমানিক ২৫ জন জলদস্যু আছে। স্থানীয়ভাবে ওদের খাবার সাপ্লাই আসে৷ কখনো দেরি হলে জাহাজ হতে নেয়া হয়৷’
এদিকে, এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই হওয়ার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও জাহাজটি এবং এর জিম্মি ২৩ নাবিকের মুক্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আসেনি। সর্বশেষ ২০ মার্চ জলদস্যুরা যোগাযোগ করেছিল। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
সর্বশেষ তথ্যমতে, সোমালীয় পান্টল্যান্ড পুলিশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ভারতীয় নৌবাহিনীর কড়া নজরদারিতে রয়েছে জিম্মি জাহাজটি। এসব বাহিনীর সঙ্গে রয়েছে কমান্ডো হেলিকপ্টার ও যুদ্ধজাহাজ।
বিবিসি সোমালিকে ২৩ মার্চ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পান্টল্যান্ডের নুগাল পুলিশ বিভাগের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী আহমেদ মারদুউফ বলেছেন, এমভি আবদুল্লাহ এখন সোমালিয়ার জিফলের উপকূলীয় এলাকায় আছে।
এমভি আবদুল্লাহর মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মুখপাত্র মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, ২০ মার্চের পর আর যোগাযোগ হয়নি। তবে নাবিকদের সঙ্গে নানা মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে। তারা জাহাজে সুস্থ ও নিরাপদ আছেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় বেলা একটার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সশস্ত্র জলদস্যুরা মাত্র ১৫ মিনিটে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তিন মাস আগে আরব সাগরে মাল্টার পতাকাবাহী ওই জাহাজ দখল করে নেওয়ার পর নাবিকদের জিম্মি করে জলদস্যুরা। এরপর জাহাজটি ব্যবহার করে বিভিন্ন নৌযানে তারা হামলা চালাতে থাকে।
সবশেষ পাওয়া তথ্যমতে, অবস্থান কয়েকবার পরিবর্তন করে সোমালিয়ার গদবজিরান উপকূল থেকে ৪ মাইল দূরে নোঙর করা হয়েছে জাহাজটি।