বিশেষায়িত বার্ন ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর জুলাইয়ে
জল্পনা-কল্পনা শেষে বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে চট্টগ্রামে নির্মিতব্য দেড়শ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রকল্প। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সবকিছু ঠিক থাকলে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে পারে বার্ন ইউনিটের নির্মাণকাজের। এরপরই পুরোদমে নির্মাণের কাজ শুরু করবেন চীনা প্রকৌশলীরা।
জানা গেছে, ২৮৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হতে যাওয়া বার্ন ইউনিট প্রকল্পটি আগামী ৫ অথবা ৬ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং চীন সরকারের প্রতিনিধি দল কাজ জোরদার করছেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় চীনের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের পর আগস্ট মাস থেকেই পুরোদমে কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘চীনা প্রতিনিধি দল আগস্টে কাজ শুরু করতে চায়। তার আগেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রী এ বিষয়ে সাড়া দিয়েছেন। তবে চীনের রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতির বিষয়টিও বিবেচনায় আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ৫ অথবা ৬ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে পারে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহকে কেন্দ্র করে কাজ এগিয়ে চলছে।’
এদিকে, দেড়শ’ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নকশাসহ পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের একটি প্রতিনিধি দল। তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি গত শুক্রবার বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। গতকাল ঢাকায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চমেক হাসপাতালের আওতাধীন গোঁয়াছি বাগানে নির্মিতব্য বিশেষায়িত বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মতামত প্রদান করেন। এরমধ্যে তৈরি করা নকশায় কিছুটা পরিবর্তন, যন্ত্রপাতিসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। নকশা প্রণয়নে স্থাপত্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকেও বসবেন চীনা প্রতিনিধি দল।
বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আহমেদুল কবির, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের প্রাক্তন পরিচালক ও নেভীর মেডিকেল সার্ভিসের পরিচালক সার্জন কমান্ডার মো. শামীম আহসান, চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন, হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ ছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
চীনের প্রতিনিধি দলটির আগামী ১৪ জুন বাংলাদেশ ত্যাগ করার কথা রয়েছে। তারা বার্ন ইউনিটের নির্মাণ কাজ শুরুর পূর্বে নকশাসহ যাবতীয় কার্যক্রম চূড়ান্ত করতেই বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, নির্মিতব্য বার্ন ইউনিট প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র বাবদ মোট ১৭৯ কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার চীন সরকার বহন করবেন। বাংলাদেশ সরকার ৭০ কোটি টাকা কাস্টমস ডিউটিসহ আনুষঙ্গিক রাস্তা, সীমানা প্রাচীর, বৈদ্যুতিক সংযোগ, নিরাপত্তা ইত্যাদি বাবদ মোট ১০৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার বহন করবে।
চমেকের প্রধান ছাত্রাবাস সংলগ্ন হাসপাতালের আওতাধীন গোঁয়াছি বাগান এলাকাতেই এ বার্ন ইউনিট নির্মাণ করা হবে। জায়গায়টিতে ইতোমধ্যে হাসপাতাল নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৬ তলা ভবনে নির্মিতব্য বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিটে ৩ হাজার ৬৩০ বর্গমিটার জায়গায় ৯ হাজার বর্গমিটার স্পেস থাকবে জরুরি বিভাগ ও বহিঃবিভাগসহ ১০ শয্যার আইসিইউ, ২৫ শয্যার এইচডিইউ, তিনটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ ১৫০ শয্যার বার্ন ইউনিট।