বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষ ২৮ কোটির বেশি
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২৪ প্রকাশ করেছে। ২০০০ সাল থেকে দ্বি-বার্ষিকভাবে প্রকাশ হয়ে আসা এই আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবারই প্রথম তাদের সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভার বাইরে বাংলাদেশের রাজধানীতে প্রকাশিত হলো।
মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আইওএমের মহাপরিচালক এমি পোপ ‘ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্ট ২০২৪’ আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য বাংলাদেশকে নির্বাচন করায় আইওএমকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ দেশে দ্রুততম সময়ে প্রত্যাবাসন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজারে তাদের আশ্রয় এলাকা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং জঙ্গিবাদের ‘ব্রিডিং গ্রাউন্ড’ হিসেবে ব্যবহার শুধু দেশেরই নয়, আন্তর্জাতিক সংকটে রূপ নিচ্ছে।
বাংলাদেশে আসা আইওএম মহাপরিচালককে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং এই সংকট নিরসনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি আইওএম বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশাপ্রকাশ করেন ড. হাছান মাহমুদ।
ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজায় ইসরায়েলি হামলার কারণে উদ্বাস্তু হাজার হাজার মানুষের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার কারণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে, যা আমলে নেওয়া ও সমাধানের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করা এখন সময়ের দাবি।
আইওএম মহাপরিচালক এমি পোপ প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বে ২৮ কোটিরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে প্রায় ১২ কোটি ৭০ লাখ মানুষই যুদ্ধ-বিগ্রহ-সংঘাত ও নানা দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত। এটি দুশ্চিন্তার বিষয়। পাশাপাশি অভিবাসনের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির ধ্বনাত্মক দিকের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
এমি পোপ বলেন, ২০০০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের প্রেরিত আয় ১২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৬৫০ শতাংশ বেড়ে ৮৩১ বিলিয়ন হয়েছে। এই আয় বাংলাদেশসহ বহু দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
প্রতিবেদনের গুরুত্ব তুলে তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্টের প্রমাণ-ভিত্তিক তথ্য ও বিশ্লেষণগুলো মানুষের গমনাগমনের অন্তর্নিহিত রহস্য বুঝতে সাহায্য করে যা অনিশ্চিত বিশ্বে অবহিত সিদ্ধান্ত এবং কার্যকর নীতি প্রণয়নে অত্যন্ত জরুরি।
ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, মিশন প্রধান, কূটনীতিক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অভ ডেলিগেশন ও রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এবং অস্ট্রেলিয়ার এক্টিং হাইকমিশনার নাদিয়া সিম্পসন এবং বাংলাদেশে আইওএম মিশন প্রধান আব্দুসসাত্তার ইসোয়েভ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।