বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
তীব্র গরমের মধ্যে চট্টগ্রামের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি কমেছে হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানির লবণাক্ততা। সেইসঙ্গে সরবরাহ বেড়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার। এতে স্বস্তি মিলেছে পানির সংকটে থাকা গ্রাহকদের। এরপরও প্রায় পাঁচ কোটি লিটার সরবরাহ ঘাটতি আছে। কারণ পানির চাহিদা আছে ৫০ কোটি লিটার। সেখানে সোমবার ৪৫ কোটি লিটারের মতো সরবরাহ করেছে ওয়াসা।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, সোমবার ওয়াসার চার প্রকল্প থেকে পানি উৎপাদন হয়েছে ৪৫ কোটি লিটার। এর মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্পের ফেইজ-১ থেকে উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ১৩ কোটি লিটার, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প ফেইজ-২ থেকে সাড়ে ১৩ কোটি লিটার, মোহরা পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার এবং মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার। তবে ভাটার কারণে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্পের ফেইজ-১ এবং ফেইজ-২ এ উৎপাদন কিছুটা কমেছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় অবস্থিত শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে দুটি বৃহৎ প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা ১৪ কোটি লিটার করে ২৮ কোটি লিটার। তবে ভাটার সময় উৎপাদন কিছুটা কমে যায়। বর্তমানে সব মিলিয়ে দুটি প্রকল্পে ২৭ কোটি লিটারের মতো উৎপাদন হচ্ছে। তবে উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ কোটি লিটার হলেও ৩০ কোটির বেশি উৎপাদন হতো।’
বৃষ্টির কারণে গত দুই দিন পানিতে লবণাক্ততার সমস্যা কেটে গেছে বলে জানালেন মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘এখানে উৎপাদন ক্ষমতার বরাবরাই সোমবার ৯ কোটি লিটার উৎপাদন হয়েছে। লবণাক্ততার সমস্যা কেটে গেছে শেখ রাসেল পানি শোধনাগারেও। এ কারণে ওই প্রকল্পে পুরোপুরি ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হয়েছে।’
গরমের কারণে পানিতে লবণাক্ততার সমস্যা বেড়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘এ বছর পানিতে দুই হাজার ১০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা ধরা পড়েছে। লবণাক্ততার পরিমাণ ৭০০ হলেই আমরা পানি সরবরাহ বন্ধ করে রাখি। এ কারণে গত কিছুদিন ধরে পানি উৎপাদন কম হয়েছিল। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা কেটে গেছে। এখন পানি সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।’
গত ১০-১৫ দিন তীব্র গরমের সঙ্গে পানি সরবরাহ কম ছিল জানিয়ে চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ‘ওয়াসার পাইপে সবসময় পানি থাকতো না। বৃষ্টির পর থেকে সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।’
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনা তংচঙ্গা বলেন, ‘রবিবার বিকাল ৩টা থেকে সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিছু জায়গায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবারও হতে পারে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা দেখা দিয়েছিল। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, লিটারে ৪০০-৬০০ মিলিগ্রাম লবণাক্ততা হলে সে পানি খাবার অনুপযোগী। যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর যে পরিমাণ পানিতে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে এবার তার চেয়েও বেশি দেখা গেছে। নদীতে মিঠা পানির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং সাগরের লবণাক্ত পানি নদীতে ঢুকে পড়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন ৭৮ হাজার ৫৪২ জন। বাণিজ্যিক গ্রাহক আছেন সাত হাজার ৭৬৭ জন। ৭৭০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে সংস্থাটি পানি সরবাহ করে। বেশিরভাগ লাইন পুরোনো হওয়ায় সংকটে থাকতে হয় গ্রাহকদের। লাইনে লিকেজ বা ছিদ্রের কারণেও পানি নষ্ট হয়। লবণাক্ততার কারণেও সংকট দেখা দিলে গ্রাহকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।