ধর্ম

বৃষ্টির ময়লা পানি কাপড়ে লাগলে নামাজ হবে?

তীব্র তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টি কার না ভালো লাগে। তাপপ্রবাহের সময় একটু বৃষ্টির জন্য মোটামুটি সবাই চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে। তবে নগর জীবনে বৃষ্টি পরবর্তী পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর হয় না।

কাদা, জমে থাকা পানি স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটায়। কোথাও শান্তিতে হাঁটার উপায় থাকে না। চলাফেরা করতে গিয়ে বৃষ্টির জমে থাকা ময়লা পানি জামা-কাপড়ে লেগে যায়। নোংরা পানিতে অপবিত্র হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। তাই কাপড়ে বৃষ্টির পর জমে থাকা পানি লাগলে যে-কারো মনেই কাপড়ের পবিত্রতা-অপবিত্রতা নিয়ে সন্দেহ জাগে। এমন কাপড়ে নামাজ হবে কি না—এমন সন্দেহও থেকে যায়।

এমন পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতামত হলো—

বৃষ্টির কারণে রাস্তায় জমে থাকা পানি নাপাক বা অপবিত্র বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই পানিতে স্পষ্ট কোনো অপবিত্র বস্তু দেখা যাবে। স্পষ্ট কোনো অপবিত্র বস্তু দেখা গেলে সেই পানি অপবিত্র বলে গণ্য হবে। এবং তা কারো কাপড়ে লাগলে তা নাপাক হবে।

আর বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে অপবিত্র কিছু দেখা না গেল তা কাপড়ে লাগলে ওই কাপড় নাপাক হবে না। বরং তা পবিত্র বলেই ধর্তব্য হবে। এই কাপড়ে নামাজ হবে। তবে এই কাপড় পরিবর্তন করে নামাজ পড়ার মতো সুবিধা থাকলে তা পরিবর্তন করে নেওয়াই উত্তম।

তবে বৃষ্টির সময় কোথাও পানি জমে যাওয়ার পর যদি সেখানে নাপাক দেখা যায় বা নাপাক ড্রেনের পাশে রাস্তা হয়, আর সেই নাপাক রাস্তায়ও চলে আসে, তাহলে এমন রাস্তায় পতিত পানির ছিটা নাপাক। তাই গায়ে বা কাপড়ে সেই পানি লাগলে ধুয়ে নিতে হবে।

যদি কোনো ব্যক্তিকে প্রতিদিনই ড্রেনের পানি অতিক্রম করতে হয় এবং এ থেকে বেঁচে থাকাও কষ্টকর। তাহলে ওই পানির ছিটা লাগলে (যদি ময়লা দেখা না যায়) মাজুর হিসেবে মাফ পাবার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু নাপাকি দেখা গেলে তা দূর করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।

বৃষ্টির পর রাস্তা কাদা হয়ে যায়, রাস্তার ওই কাদা নাপাক নয়। বিশেষত কাদায় নাপাকি দেখা না গেলে তা পবিত্র। সুতরাং তা কাপড়ে লাগলে কাপড় অপবিত্র হবে না। তাই এ অবস্থায় নামাজ পড়লে তা সহিহ হবে। তবে ধোয়ার সুযোগ থাকলে এমন ময়লা কাপড়ে নামাজ না পড়াই ভালো।

(আলমাবসুত, সারাখসি: ১/২১১; কিতাবুল আছল: ১/৫২; আততাজনিস ওয়াল মাজিদ: ১/১৫৯; আলমুলতাকাত ফিল ফতোয়া, পৃ-২০; রদ্দুল মুহতার: ১/৩২৪, ১/৫৩১; হালবাতুল মুজাল্লি: ১/৫১৩)

বৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার রহমত নিয়ে আসে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ দ্বারা মৃতপ্রায় ধরিত্রীকে পুনর্জীবিত করেন; তাতে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তার ঘটান; এতে ও বায়ুর দিক পরিবর্তনে এবং আকাশ পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৬৪)।

আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘আর তিনি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা তোমাদের জীবিকাস্বরূপ ফলমূল উৎপাদন করেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২২)।

ঝড়ঝঞ্ঝা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মহা গভীর সমুদ্রতলের অন্ধকারের মতো, যাকে আচ্ছন্ন করে তরঙ্গের ওপর তরঙ্গ, যার ঊর্ধ্বে মেঘপুঞ্জ, গাঢ় অন্ধকার স্তরের ওপর স্তর, যদি একজন মানুষ হাত বাড়ায় তা আদৌ সে দেখতে পাবে না, আল্লাহ যাকে আলো দান না করেন তার জন্য কোনো আলো নেই।’ (সূরা নূর, আয়াত : ৪০)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *