দেশজুড়ে

বেইলি রোডের বাতাসে বিষাদ, এক আগুনে কত স্বপ্নের মৃত্যু!

ঢাকা: বেইলি রোডে প্রেমের কবিতা কিংবা গিটারের টুংটাং শব্দ শোনা যায় প্রায়ই। বলা হয় বেঁচে থাকার কারণও। এখন বেইলি রোডে বিষাদের করুণ সুর, স্বজন হারানোদের আর্তনাদে বাতাস ভারী। এখন বেইলি রোডে শূন্যতার শোকসভা। বহুবারের মতো আরও একবার, আগুন অঙ্গার করেছে বহু স্বপ্ন।

মোবারক হোসেনের কদিন পরই চলে যাওয়ার কথা ইতালিতে। বহুদিন ধরেই তার ঠিকানা ভিনদেশ। এক মেয়ে এসএসসি দিচ্ছে, তার সঙ্গে আরও দুই সন্তান ও স্ত্রীরও স্বপ্নের গন্তব্য ইতালি। দেশ ছাড়ার আগে পরিবারের সবাইকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন মোবারক। এখন তাদের সবার ঠিকানা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একই কবরস্থানে।

বুয়েটে পড়া লামিসা আক্তারই যেমন। তার বাবা পুলিশের ডিআইজি মো. নাসিরুল ইসলাম। বছর ছয়েক আগে যখন স্ত্রী হারান, তখনও তার স্বপ্নের পুরোটাজুড়ে দুই মেয়ে। তারা এখন বড় হয়েছেন, বুয়েটে পড়ছেন; অবসরের পর বাবার দেখভাল করতে পারবেন ওই স্বপ্নই হয়তো দেখছিলেন নাসিরুল। তার এক সহকর্মীর আর্তনাদে সম্ভবত মিশে থাকে দীর্ঘশ্বাস, ‘জীবন এত ছোট কেন, এ ভুবনে?’

বেইলি রোডের রেস্তোরাঁয় যখন আগুন লাগে, কিছুক্ষণ পরই ভেঙে পড়ে সামনের কাচ। আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা আর মৃত্যুর শঙ্কা ঘিরে ধরে সবাইকে। জীবন বাঁচানোর ওই কঠিন মুহূর্তে সবাইকে নিরাপদে নিয়ে আসেন রেস্টুরেন্টের ক্যাশিয়ার ও এক ওয়েটার।

তাদের পরিণতি তো তাও জানা গেছে। নাজমুল ইসলামের বাবা নজরুল ইসলাম তার ছেলে কোথায় আছেন, আদৌ বেঁচে আছেন কি না; জানেন না তাও। চার বন্ধু নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে আসা নাজমুলের দুই বন্ধু লাফিয়ে বেঁচে যান। আগুনে দগ্ধ আরেক বন্ধু চিকিৎসাধীন। নাজমুল কোথায়? ওই উত্তরই খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার বাবা।

মোবারকের ফ্লাইটের যাত্রী কি খুঁজে ফিরবেন কেন তার পাশের সিটটা খালি? নাজমুলের বাবা, ছেলের বন্ধ ফোনে কি কখনো কল ঢোকার অপার্থিব শান্তিটুকু পাবেন কোনো অলৌকিকতায়? অথবা লামিসার বাবা, তিনি কি সারাটা জীবনই ‘জীবন কোন ছোট, এ ভুবনে’ এই উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই হারিয়ে যাবেন কোথাও? প্রশ্ন আছে, উত্তর আরও এক আগুন অবধি কিংবা কখনোই মিলবে না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *