বৈরী আবহাওয়া: বিদ্যুৎ নেই লক্ষ্মীপুরের বেশিরভাগ এলাকায়
বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৈদ্যুতিক লাইন ও খুঁটি বিধ্বস্ত হওয়ায় লক্ষ্মীপুরের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ফলে অন্ধকারে রয়েছে এ জেলার ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত গভীর রাত থেকে জেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও সারাদিনে একবারের জন্যেও বিদ্যুৎ আসেনি। আবার কোথাও কোথাও দিনের বেলা বিদ্যুৎ এলেও রাতে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘ সময়ে বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তিতে জেলার বাসিন্দারা।
আবার বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ রয়েছে। অনেকের মোবাইল ফোনে চার্জ দিতে না পারায় বন্ধ হয়ে গেছে। বাসাবাড়িতে দেখা দিয়েছে ব্যবহৃত ও খাবার পানির সংকট। নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে ফ্রিজে থাকা মাছ-মাংস।
জানা গেছে, জেলার সদর এবং আরও ৪টি উপজেলাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি। তাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। বৈরী আবহাওয়া কারণে বিদ্যুৎ লাইন বিধ্বস্ত হওয়ায় সমিতির আওতাধীন চার লাখ মিটার সংযোগে থাকা ১২ লাখের বেশি লোকজন এখনো অন্ধকারে রয়েছে।
আর পৌর এলাকায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবির)। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল এবং সন্ধ্যার পর বিপিডিবির আওতাধীন পৌর এলাকার কিছু কিছু স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
সদর উপজেলার যাদৈয়া গ্রামের গৃহবধূ শারমিন আক্তার বাংলানিউজকে জানান, তিনি পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক। গত দুইদিন ধরে তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। এতে খাবার ও পর্যাপ্ত পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফ্রিজের মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মোবাইল ফোনে চার্জ দিতে পারছেন না৷ এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কেও ঠিকমতো কথা বলা যাচ্ছে না। মোবাইল ডাটাও চালু হচ্ছে না।
বিপিডিবির গ্রাহক পৌর এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল নাইম বলেন, শুক্রবার রাতে বিদ্যুৎ চলে গেছে। রাতে কিছু সময়ের জন্য এলেও শনিবার ভোর রাত থেকে এখন পর্যন্ত (শনিবার রাত ১১টা) পর্যন্ত বিদ্যুতের দেখা মেলেনি। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় চরম দুর্ভোগে আছি।
লক্ষ্মীপুর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান শনিবার রাত ১০টার দিকে বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সাড়ে পাঁচ লাখ গ্রাহক। চার লাখ গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎহীন।
তিনি জানান, টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বৈদ্যুতিক লাইন বিধ্বস্ত হয়ে আছে। গাছপালা পড়ে লাইন ছিঁড়ে গেছে। খুঁটি পড়ে গেছে। বন্যার কারণেও বৈদ্যুতিক লাইনের খুঁটি দুর্বল হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে লাইন মেরামতের কাজে বিঘ্ন ঘটছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে লাইন মেরামত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পরীক্ষিত রায় শনিবার রাত ১১ টার দিকে বাংলানিউজকে বলেন, রামগঞ্জ এবং বেগমগঞ্জ গ্রিড থেকে আসা ৩৩ হাজার কেভি লাইনের মধ্যে ত্রুটি ছিল। রামগঞ্জ গ্রিড থেকে এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। বেগমগঞ্জ গ্রিড থেকে আসা লাইনে এখনো ত্রুটি আছে। আমরা শনিবার বিকেল ৩টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পেয়েছি। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে সবগুলো ফিডার চালু করতে সক্ষম হই। তবে লাইনের ওপর গাছের ডালপালা পড়ে থাকার কারণে কিছু কিছু লাইন ছিঁড়ে গেছে।
ট্রান্সফার মারের ফিউজ জ্বলে গেছে। সেগুলো মেরামতের কাজ চলছে। মেরামতের কাজ শেষ হলে পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। বৃষ্টিতেও আমাদের কর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।