বোমা নিষ্ক্রিয় করবে রুয়েটের শিক্ষার্থীদের তৈরি রোবট
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটে এবার যুক্ত হলো একটি দূরনিয়ন্ত্রিত রোবট। এটি তৈরি করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) একদল শিক্ষার্থী।
তারা সবাই মেকাট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা হলেন রুয়েট রোবটিকস সোসাইটির সদস্য এস এম শাফায়েত জামিল (দলনেতা), কাজী আতিফ, মো. আল তাসদীদ উল, ইয়াশসির আরাফাত ও আরিফুল ইসলাম। পরামর্শক ছিলেন যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. রোকনুজ্জামান রানা ও মেকাট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. ফিরোজ আলী।
রোবটের বৈশিষ্ট্য
শিক্ষার্থীদের তৈরি রোবটটির নাম হেডিস-এক্স-জিরোথ্রি। দলনেতা শাফায়েত জামিল জানালেন, গ্রিক পুরাণে হেডিসকে বলা হয় ‘পাতাললোকের দেবতা’। আর এক্স-জিরোথ্রি নির্দেশ করে রোবটের ট্রায়াল নম্বর। এভাবেই তাঁরা রোবটের নাম করেছেন হেডিস-এক্স-জিরোথ্রি।
নির্মাতারা বলছেন, এই রোবট বোমা শনাক্ত ও উদ্ধার করতে পারে। উঁচু-নিচু রাস্তা, মাঠ, কাদামাটিসহ যেকোনো পথ পাড়ি দিতে পারে। রোবটটি প্রায় তিন কেজির বেশি ওজন উত্তোলন ও বহনে সক্ষম। রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে এক কিলোমিটার দূর থেকে একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিশেষভাবে তৈরি হাত দিয়ে বোমা নিষ্ক্রিয়করণের কাজ করবে এই রোবট।
আছে তারহীন ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন। যার মাধ্যমে দূর থেকেই অপারেটরকে ‘মিডিয়া কনটেন্ট’ পাঠাতে পারে এটি। নাইট ভিশন মোড ও শক্তিশালী হেডলাইট থাকায় রোবটটি দিনের মতো রাতেও সমান কার্যকর। শাফায়েত জামিল বলেন, ‘রোবটটিকে অন্য যেকোনো রোবট থেকে আলাদা করে এর নির্মাণ ব্যয় ও গুণগত মান। পুরোপুরি দেশে নির্মিত হওয়ায় নির্মাণ ব্যয় খুবই সীমিত। প্রায় সমান সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন অন্য রোবটের বাজারমূল্য এর তুলনায় ৭ থেকে ১০ গুণ বেশি।’
ফাঁকা ক্যাম্পাসে নতুন অভিজ্ঞতা
রোবট বানাতে গিয়ে সময় ও অর্থ নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে পুরো দল। সেটা কী রকম? শাফায়েত জামিল বললেন, ‘গত ২৮ মার্চ প্রকল্পটি হাতে পাই আমরা। তখন ২০ রোজা চলছে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সবাই যার যার বাড়ি চলে গেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে নির্দেশনা ছিল, ১২ দিনের মধ্যে কাজটা করতে হবে। অগত্যা আমরা একমুহূর্ত না ভেবে রুয়েটে একত্রিত হই। হল বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে গেলাম।
ঈদে বাড়ি গিয়ে ঈদের পরের দিনই আবার ক্যাম্পাসে ফিরলাম। টানা এক সপ্তাহ পরিশ্রমের পর কাজ শেষ হয়েছে।’ সেই সময়ে নতুন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন জানিয়ে শাফায়েত জামিল বলেন, ‘রোজা ও ঈদের বন্ধের মধ্যে ফাঁকা হলে শুধু আমরা চারজন ছিলাম। এক দিন, দুই দিন নয়, প্রায় ১০ দিন। এটি ছিল একটি নতুন ও মজার অভিজ্ঞতা।’
অধিকাংশই নিজেদের তৈরি যন্ত্রাংশ
প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ খুব বেশি ছিল না। আবার রোবটিক যন্ত্রাংশ ও ইলেকট্রনিকস ডিভাইসগুলোর দাম বেশি, খুবই দুর্লভ। বেশির ভাগ যন্ত্রাংশই তাই নিজেদের তৈরি করতে হয়েছে। চেসিস থেকে শুরু করে রোবটিক হাত, এমনকি চাকাও শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে বানিয়ে নিয়েছেন। রোজা ও ঈদুল ফিতরের বন্ধে রুয়েটের মেশিন শপ বন্ধ থাকায় বেশ বিপাকে পড়তে হয়েছিল। স্থানীয় ওয়ার্কশপ ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হয়েছে।
১৯ এপ্রিল বিকেলে নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে হস্তান্তর করা হয় হেডিস-এক্স-জিরোথ্রি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।