জাতীয়

ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগে পুরো বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না

কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে পুরো বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনরা।

শনিবার রাজধানীতে সম্পাদকদের শীর্ষ সংগঠন এডিটরস গিল্ড আয়োজিত ‘সুশাসনের অঙ্গীকার, সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করে এডিটরস গিল্ডের সভাপতি একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু।

বক্তারা বলেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে কিন্তু পুলিশ বাহিনীতে অনেক ভালো অফিসারও আছেন। তেমনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জন্য সেনাবাহিনীকে কলঙ্কিত করার মানে হয় না।

বক্তরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বিশেষ কয়েকজনের কথাই শোনে। তারাতো পুরো নাগরিক সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে না বলেও মন্তব্য করেন বিশিষ্টজনরা।

তারা আরও বলেন, সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বাজার সচল রাখা সম্ভব। দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স শুধু বললে হবে না, সেই অনুযায়ী কাজও করতে হবে। উদারনীতি অনিবার্য তবে বাজারের নিয়ন্ত্রণ শুধু ক্ষমতাবানদের হাতেই থাকছে তাই সাধারণ মানুষ পিছিয়ে থাকছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান আলোচনায় বলেন, নিশ্চয় জেনারেল আজিজের ব্যাপারে অভিযোগ বা কর্মকাণ্ডলো সরকারকে জানানো হয়েছিলো। তার বিরুদ্ধে যে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ সেটা তাকেই ডিফেন্ড করতে হবে। সরকারের দায়িত্ব এটা নিয়ে তদন্ত করুক, কারণ জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে। সরকার তো একজন না, সরকার পুরো ব্যবস্থা। ব্যাক্তি যারা দোষী তাদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। পুরো ব্যবস্থা দোষী নয়।

তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টি বলেন, সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রেই শিক্ষার্থীদের প্রহার করা হচ্ছে। সুকৌশলে স্যাংশন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রশ্ন করা হয়। বেনজিরকে দিয়ে পুরো বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সহজ। এই বিতর্কের প্রয়োজন ছিলো। কেউ যে বিচারের বাইরে না সেটা জানানোর জন্য এটা প্রয়োজন ছিলো।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আইন সবার জন্য সমান। বাধা আসলেও আইন থেমে থাকবে না। বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে, কিন্তু পুলিশ বাহিনীতেতো অনেক ভালো মানুষও আছেন। সুতরাং পুরো বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেই। জেনারেল আজিজের অভিযোগের বিষয়েও একইভাবে প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীও সাজা ভোগ করছেন। ড. ইউনূসকেও আইনি লড়াই করে যেতে হবে, যতই বিদেশি চাপ থাকুক। আমরা চাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছভাবে চলুক। গুটিয়েকক মানুষের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে যেন প্রশ্নবিদ্ধ করা না হয় সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, আওয়ামী লীগের এবারের ইশতিহারের মূল বিষয় ছিলো সুশাসন। চারমাসে কতটুকু অগ্রগতি হলো সেটা নিয়েই আলোচনা। সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর স্যাংশন, এমপি আনোয়ারুলের আজমের হত্যাকাণ্ডসহ বেশকিছু বিষয় আলোচনা রয়েছে। লঘু পাপের শাস্তির কারণে গুরু পাপ যারা করেছেন তারা বাইরে রয়ে যাচ্ছেন কি না সেটাও দেখতে হবে।

তিনি বলেন, সুশাসনের প্রধান জায়গা অর্থনীতি। কিন্তু গত বিশ বছরে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ একটা অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পরেছে। রির্জাভ কমে যাওয়া, ব্যাংকের মার্জার, ডলার সঙ্কট সবদিক দিয়ে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, গত ১২ বছরে বিভিন্ন কারণে এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। অর্থনীতির আকার যদিও বেড়েছে তবে এই অবস্থার জন্য কারা দায়ী সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না। তবে যেসব ব্যাংক অন্যায় করেছে তারা কি শাস্তি পেয়েছে! ব্যাংকগুলার পরিচালক পর্ষদের সদস্যদের দায়ী করা যাচ্ছে না। এখন ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি করা যাচ্ছে না অথচ মৌলিক কিছু পণ্য কিন্তু আমদানি করতেই হবে। এখন পর্যন্ত বিপদজনক অবস্থাতেই আছে। হলমার্কের বিষয়টা নাকি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ জানতোই না। এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। যদি না জানে তাহলে তারা অপদার্থ।

অর্থনীতি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এম এম আকাশ বলেন, বাজার একটা মেকানিজম, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের বাজারে তিনটা প্লেয়ার। একটা হলো আমলাতন্ত্র, একটা হলো ব্যবসায়ী এবং আরেকটা হলো রাজনীতিবিদ। এখন যদি তারা অসৎ হয়ে পড়েন তাহলে কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এখানে ব্যাক্তি নয় পুরো সিস্টেমটাই পাল্টে যায়। দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স শুধু বললে হবে না, সেই অনুযায়ী কাজও করতে হবে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, মাথাপিছু আয় বাড়ছে। যদিও বৈষম্য বাড়ছে। প্রবৃদ্ধিও ছয় শতাংশের ওপরে। আমাদের ঋণ সঠিকভাবে সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি উৎপাদনও ভালো। যুদ্ধগুলোর কারণে সঙ্কটে আছি। কিন্তু আমাদের শক্তির ওপর ভর করে যদি আমরা দুষ্টচক্রগুলোকে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু এই দুষ্টচক্রকে ভাঙার চেষ্টা অব্যহত থাকতে হবে।

তিনি বলেন, আন্তজার্তিকভাবে সব দেশের সাথেই আমাদের সম্পর্ক ভালো আছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সবসময় ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাওয়া ব্যাহত হয়। এখন যেমন হচ্ছে, তাই এখন সিদ্ধান্ত নিয়ে এই বাধাগুলোকে দূর করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *