জাতীয়

ভারতের বন্যা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

একটানা বৃষ্টির জেরে ভারতের একাধিক রাজ্যে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন। রাস্তাঘাটে অতিরিক্ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও আবার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে উত্তর প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, আসাম, উত্তরাখণ্ডসহ একাধিক রাজ্যে। ফলে সেই সব রাজ্যে থাকা বিভিন্ন নদীর পানির স্তর বাড়ছে। আর যার কারণে তৈরি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। ইতোমধ্যেই গোটা ভারতে বৃষ্টি, বজ্রপাতার কারণে মৃত্যু হয়েছে একাধিক মানুষের।

উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে বন্যা পরিস্থিতির এখনো কোনো উন্নতি হয়নি। চলতি বর্ষা মৌসুমে এখনো পর্যন্ত ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যটিতে। আসাম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী-কাছার, বরপেটা, কামরূপ, নগাঁও, ধুবরি, দারাং, বিশ্বনাথ, গোলাঘাট সহ রাজ্যের ২৬টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত। ব্রহ্মপুত্র নদ সহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১৪ লাখ মানুষ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ধুবরি জেলায়। প্রায় ২ লাখ ৪১ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। দুর্গতদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার জন্য উদ্ধার কার্য চালাচ্ছে দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। খোলা হয়েছে একাধিক ত্রাণ শিবির।

মধ্যপ্রদেশের অবস্থাও উদ্বেগজনক। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী-গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের কারণে গড়ে প্রতিদিন তিনজন করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে মধ্যপ্রদেশে। বৃষ্টিপাত নিয়ে রাজ্য তরফে দেওয়া শেষ বিবৃতিতে চলতি বছরের ১৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত বর্ষাজনিত কারণে ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে। সরকারি তথ্য বলছে-অত্যাধিক বৃষ্টির কারণে ৪৪টি জেলার ২৬৮টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত, আহত প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ, দেড় শতাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, ৪৩৬টি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি জনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ৫৪ জনের। রাজ্যের ৯২৩টি গ্রামের প্রায় ১৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। দুর্গত মানুষদের উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়েছে জাতীয় ও রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনী। লিচু এলাকার মানুষদের অপেক্ষাকৃত উঁচু ও নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত। রাজ্যের রিলিফ কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে নিহত ৫৪ জনের মধ্যে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে, ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে এবং ২ জনের সাপের কামড়ে। রাপ্তি, সারদা, ঘাঘরা, বুধি রাপ্তি, কুয়ানো সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলির পান স্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে ১৬টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবারই আকাশপথে বলরামপুর, শ্রাবস্তীসহ বন্যা কবলিতগুলো এলাকা গুলি ঘুরে দেখেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। পরে দুর্গতদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিলি করেন। সেই সাথে দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিলি ও উদ্ধারকাজে আরো গতি আনতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বন্যায় নিহত মানুষদের পরিবার পিছু আর্থিক ক্ষতিপূরণও তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে ভারতের বাণিজ্য নগরী মুম্বাই শহরে। একাধিক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় যানজট। আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে-আগামী ২৪ ঘণ্টা চলবে এই বৃষ্টিপাত। হলে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে শুক্রবার হলুদ সর্তকতা এবং শনিবার কমলা সর্তকতা জারি করা হয়েছে। আন্ধেরি, যোগেশ্বরী, সিয়ন, ওরলি সহ একাধিক জায়গায় এক হাঁটু পানি জমে গেছে। মালাডে রীতিমতো শিলা বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তর থেকে বলা হয়েছে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত কোঙ্কন ও গোয়া, মধ্য মহারাষ্ট্রের ঘাট অঞ্চলে ভারী থেকে অতি বাড়ি বৃষ্টিপাত হতে পারে। শনিবার ও মঙ্গলবারের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে কেরালা এবং কর্ণাটকের উপকূলীয় ও দক্ষিণাঞ্চল এলাকায়। শুক্রবার এবং শনিবার বৃষ্টি হতে পারে গুজরাটে। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ইয়ানামের উপকূল অঞ্চল সহ তেলেঙ্গানা, মারাঠওয়াড়া, রায়ালসীমাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *