জাতীয়

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান

ভাষা আন্দোলন বাঙালির ইতিহাসের এক অমলিন অধ্যায়। সেই ইতিহাসের সাথে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে।

রাজনৈতিক কারণে ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৪৯ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি কারাগারে আটক ছিলেন। এর তিন মাসেরও কম সময় পর ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং মুক্তি পান ঐ বছরের জুনের শেষ দিকে। এরপর ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই বছর বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন কারাগারে বন্দি থাকায় ভাষা আন্দোলনের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে তিনি সরাসরি আন্দোলনের মাঠে থাকতে পারেননি। তারপরও তিনি হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন না। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন যখন প্রবল ঢেউয়ের রূপ নিয়েছে, তখন কখনো কারাগার থেকে আবার কখনো হাসপাতাল থেকে গোপন চিরকুটের মাধ্যমে তিনি ভাষা-সংগ্রামীদের নানান দিক-নির্দেশনা দিতেন। 

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই ভাষার প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাথে বাঙালিদের মতভেদ শুরু হয়। পূর্ব বাংলা বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পুরো পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৫৬% আর তাদের মাতৃভাষা বাংলা। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সেই হার ৪৪%। অথচ তারা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মানতে চাইল না। তারা ঘোষণা করল, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা।

১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গঠিত গণতান্ত্রিক যুবলীগের কর্মীসম্মেলনে বাংলা ভাষা সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এই প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেন তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। প্রস্তাবগুলো উত্থাপনের পর তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের লেখার ভাষা, আইন-আদালত এবং প্রশাসনিক ভাষা বাংলা হবে বলে এই কর্মীসম্মেলন প্রস্তাব করছে। বাংলা ভাষার দাবির প্রশ্নে এটাই ছিল প্রথম সোচ্চার উদ্যোগ এবং তাতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল সরাসরি এবং নেতৃস্থানীয়, যা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। একই বছরে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে তিনি বাংলা ভাষার পক্ষে জনগণের স্বাক্ষর সংগ্রহের অভিযানে অংশ নেন এবং বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে যোগদান করেন। শেখ মুজিব সদলবলে মিছিল করে এসে সেই সভায় যোগদান করেন এবং সেখানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি তুলে ধরেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *