কক্সবাজারচট্টগ্রাম

ভুয়া ডাক্তার হোসনে আরার ফাঁদে প্রসূতি ও নবজাতক

ভুয়া ডাক্তার হোসনে আরার ফাঁদে প্রসূতি ও নবজাতক

নামে যদিও হোমিও হল, কিন্তু সেখানে প্রসূতি ও নবজাতকের চিকিৎসা হয়; শুধু তাই নয় কেবিনে রেখে সন্তানও প্রসব করানো হয় এ ‘হোমিও চিকিৎসকের’ তত্ত্বাবধানে। গ্রামের সহজ সরল মানুষকে তিনি নরমাল ডেলিভারির প্রলোভন দিয়ে তার কাছে নিয়ে আসেন। ওই হোমিও হলে গিয়ে প্রসবজনিত জটিলতা বেড়ে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চকরিয়ার বদরখালী বাজারে পাকা ভবনের ৩টি কক্ষ ভাড়া নিয়ে ৬ শয্যার হাসপাতাল গড়েছেন হোসনে আরা। বাইরে লেখা ‘শেফা হোমিও হল’। সাইনবোর্ডে লেখা, ‘প্রভাষক ডা. হোসনে আরা বেগম, প্রভাষক, এম ইসলাম জসিম উদ্দীন হোমিও প্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদর।’ সাইনবোর্ডের একাংশে বড় করে লেখা ‘প্রসূতি ও স্ত্রী রোগে অভিজ্ঞ’।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলাধীন বদরখালী বাজারে হাসপাতাল খুলে প্রসূতিদের চিকিৎসা দিচ্ছেন হোসনে আরা বেগম নামের ওই নারী।

গ্রামের সহজ-সরল মানুষ হোসনে আরাকে চিকিৎসক ভেবে আসেন ওই শেফা হোমিও হল নামের ওই মিনি হাসপাতালে। আর সেখানে ঘটেছে প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর মত ঘটনা। চিকিৎসক না হয়েও হোসনে আরা অবৈধ উপায়ে ‘চিকিৎসা ব্যবসা’ করছিলেন। এবার বিষয়টি আবারও আলোচনায় উঠল এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনার পর।

জানতে চাইলে ভিকটিম প্রসূতির দেবর রেজাউল করিম বলেন, তার বাড়ি কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর ঝাপুয়া গ্রামে। তার ভাই জিয়াবুল কবিরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ‘শেফা হোমিও হলের’ ডাক্তার হোসনে আরার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। রোগীর শারীরিক অবস্থা ভাল আছে জানিয়ে হোসনে আরা তার চেম্বারে রোগীকে ওষুধপত্র দিয়ে অপেক্ষা করিয়ে রাখে।

রেজাউল আরও বলেন, রোগীর অবস্থা খারাপ মনে হলে ওই ডাক্তারকে পুনরায় জানানো হয়। কিন্তু তিনি সেদিকে কর্ণপাত করেননি। পরে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে অনেকটা জোর করে হোসনে আরার হাসপাতাল থেকে রোগীকে চকরিয়া সেন্ট্রাল হসপিটালে নিয়ে যাই। সেখানে অপারেশনের পর মৃত বাচ্চা প্রসব করে ভাবি।

তিনি বলেন, হোসনে আরার ভুল চিকিৎসার কারণে তার ভাবির বাচ্চা মারা গেছে। তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে শেফা হোমিও হলের সত্ত্বাধিকারী হোসনে আরা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু হোমিও চিকিৎসক। আমার চেম্বারে প্রসূতিদের বাচ্চা ডেলিভারির কাজ করা হয় না। শুধু প্রসূতি মায়েদের হোমিও চিকিৎসা প্রদান করা হয়। আমার কারণে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।’

সাইনবোর্ডে নামের পূর্বে ‘প্রভাষক’ ও ‘ডাক্তার’ লেখা থাকা ও ওই হাসপাতালে কেবিন ও বেড রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোভন দত্ত বলেন, ‘হোসনে আরা বেগম নামের এক নারী বদরখালী বাজারে হোমিও চিকিৎসার আড়ালে নরমাল ডেলিভারির কাজ করতেন, এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এক বছর আগে সেই হোমিও হলটি সিলগালা করা হয়। পরে প্রসূতি মায়েদের বাচ্চা ডেলিভারি করবেন না এমন অঙ্গীকারনামা দেন তারা। এখন আবারও ডেলিভারির কাজ শুরু করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়াও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *