লাইফস্টাইল

ভুল করে মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেয়ে ফেললে যা করবেন

আপনি কি কখনো ভুলবশত বা অজান্তে এমন খাবার খেয়েছেন যার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে? এর ফলে খাদ্যে বিষক্রিয়া বা খাদ্যজনিত অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। দিল্লির বসন্ত কুঞ্জের ফোর্টিস হাসপাতালের চিফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশনিস্ট রুচিকা জৈন বলেন, অসুস্থতার তীব্রতা নির্ভর করতে পারে খাবারের ধরন, মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্রা এবং এটি কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে তার ওপর। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের পরে অল্প সময়ের মধ্যে খাওয়া হলে প্যাকেটজাত খাবার কম ঝুঁকির কারণ হতে পারে। অপরদিকে দুগ্ধজাত দ্রব্য বা মাংস মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে তুলনামূলকভাবে দ্রুত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে খাবারগুলো কেন অনিরাপদ?

যখন খাবারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তখন তা খাওয়া ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি, ছত্রাক গঠন বা রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে অনিরাপদ হতে পারে। মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খাওয়ার ফলে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া যেমন সালমোনেলা, ই. কোলাই বা লিস্টেরিয়া গ্রহণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে। জেনে নিন মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খাওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকি সমূহ-

১. ফুড পয়জনিং

মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা খাদ্যজনিত অসুস্থতার কারণ হতে পারে। ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, জ্বর এবং গুরুতর ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন ও অঙ্গের ক্ষতি।

২. ছত্রাকের বিষাক্ততা

মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার গ্রহণ করলে ছত্রাকের বিষাক্ততা শরীরে যেতে পারে। যা অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা এবং গুরুতর ক্ষেত্রে স্নায়বিক উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।

৩. খাদ্য নষ্ট হওয়া

মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারের স্বাদ, গঠন, রঙ এবং গন্ধ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে, যা নষ্ট হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। সেক্ষেত্রে ক্ষতিকর না হলেও, নষ্ট খাবার অস্বস্তি বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার কারণ হতে পারে।

৪. ক্ষতিকারক রাসায়নিকের উপস্থিতি

কিছু খাবার, বিশেষ করে টিনজাত পণ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকতে পারে যেমন বিসফেনল A (BPA) বা phthalates, যা ধীরে ধীরে খাবারে প্রবেশ করে। মেয়াদোত্তীর্ণ টিনজাত পণ্য খাওয়ার ফলে এই রাসায়নিকগুলোর সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেয়ে থাকলে কী করবেন

আপনি যদি ভুলবশত মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেয়ে থাকেন তবে কী করবেন? পুষ্টিবিদ রুচিকা জৈন এক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেয়ে ফেললে করণীয়-

১. থাকুন শান্ত

আতঙ্কিত হলে তা সমস্যা দূর করবে না। বরং পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে। তাই ভুল করে মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেয়ে ফেললে আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকুন। গভীর শ্বাস নিন এবং আপনি কেমন অনুভব করছেন তা বুঝতে চেষ্টা করুন।

২. লক্ষণগুলো খেয়াল করুন

খাদ্যে বিষক্রিয়া বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার কোনো লক্ষণ দেখা দেয় কি না সেদিকে করু। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, জ্বর, মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা ইত্যাদি।

৩. পানি পান করুন

হাইড্রেটেড থাকুন। পর্যাপ্ত পানি পান করলে তা বিষক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করতে পারে এবং খাদ্য বিষক্রিয়ার উপসর্গগুলো উপশম করতে পারে।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

যদি গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয় বা আপনার স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে নির্দেশনা দেবেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।

৫. অবশিষ্ট খাবার ফেলে দিন

যদি সন্দেহ হয় যে, যে খাবারটি খেয়েছেন তা আপনার অস্বস্তির কারণ, তাহলে আরও খেয়ে ফেলা রোধ করতে অবশিষ্ট অংশ ফেলে দিন। নয়তো আপনার মতো ভুল করে অন্য কেউ খেয়ে ফেলতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *