ভোলায় পাঁচদিনে ১২টি রাসেলস ভাইপার উদ্ধার
গত ৫ দিনে ভোলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২টি রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) উদ্ধার করা হয়েছে। এতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে ১১টি মেরে ফেলে এবং একটি সাপ বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলার তজুমউদ্দিন, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, ও সদর উপজেলাসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি ও খেলার মাঠে একের পর এক বিষাক্ত এই সাপ উদ্ধারে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকালে সদর উপজেলার শিবপুর চায়না ইপিজেড বালুর মাঠে একটি, তজুমউদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের কাছারি বাড়ির সামনে একটি ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের জসিম হাওলাদারের বাড়িতে একটি রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায়।
এছাড়া বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে জেলার তজুমউদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় খেলার মাঠে দেখা মিলে এই সাপের।
এর আগে মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশায় ইউনিয়নে পাকার মাথা এলাকায় বাড়ির পাশে জালের সঙ্গে পেঁচানো অবস্থায় একটি রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায়। মঙ্গলবার রাতে দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের জালু মাঝির বসতঘর থেকে আরও একটি রাসেলস ভাইপার উদ্ধার করা হয়। তার আগে গত রোববার (১৬ জুন) লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ এলাকায় একটি বাড়ির শৌচাগারে এ সাপ দেখা যায়।
এছাড়াও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা ও সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও ৫টি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে সাপগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। এর মধ্যে তজুমউদ্দিন উপজেলায় পাওয়া একটি সাপ বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে জেলাজুড়ে রাসেল ভাইপার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় জানায়, বেশ কয়েকদিন ধরে জেলার সর্বত্র সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। কিন্তু এর আগে সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের কুকরি মুকড়ি, ঢালচর কিংবা মনপুরা উপজেলায় দেখা মিললেও এবার সদর উপজেলাসহ প্রায় সবস্থানেই সাপের বিচরণ বাড়ছে। একের পর এক বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের দেখা মিলছে বিভিন্ন এলাকায়।
স্থানীয় জেলে জয়নাল মাঝি বলেন, ‘আজ সকালে নদীতে মাছ শিকার করে ঘাটের দিকে যাওয়ার সময় বালুর মধ্যে এই সাপটি দেখতে পাই। পরে আরও লোকজন এসে সাপটিকে রাসেলস ভাইপার বলে নাম দেয়। এই সাপ এর আগে আর কখনো দেখিনি। সাপটি দেখতেও অনেক ভয়ানক। অন্য সাপের থেকে দেখে আলাদা। সাপটি দেখে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে মেরে ফেলে।’
জালু মাঝি জানায়, ‘তার বসতঘরে খাটের নিচে তিনটি বিড়াল মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে ঘরের লোকজন খোঁজা-খুঁজির এক পর্যায়ে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারকে ঘর থেকে বের হতে দেখেন। তখন সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। একপর্যায়ে সাপটিকে খুঁজে পিটিয়ে মেরে ফেলে উপস্থিত লোকজন।’
সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিশু বলেন, ‘এর আগে আমার ইউনিয়নে এই বিষধর সাপের দেখা পাইনি। পর পর দুই দিন এই সাপের সন্ধান মেলায় আমার ইউনিয়নবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি ও বনবিভাগের লোকজন আসার আগেই সাপটি স্থানীয়রা মেরে ফেলে।’
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ‘রাসেল ভাইপার সাপ লোকালয়ে সাধারণত খুব কমই দেখা যায়। বাচ্চা দেয়ার কারণে হয়তো ওই সাপটি লোকালয়ে চলে এসেছে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
জেলার সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম শফিকুজ্জামান, ‘চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপ সবচেয়ে বিষাক্ত ও এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বহির্গামী বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হোন। বিষক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্যু হয়।’