ধর্ম

মক্কা-মদিনার বিখ্যাত আতর বিক্রেতা ছিলেন যে নারী সাহাবি

মক্কা ও মদিনার বিখ্যাত আতর ব্যবসায়ী ছিলেন এক নারী সাহাবি। ইয়েমেন থেকে আতর এনে মক্কায় বিক্রি করতেন তিনি। মক্কা-মদিনার ধনীরাই ছিলেন তার মূল ক্রেতা।

তার নাম আসমা বিনতে মুখাররাবা (রা.)। তামিম গোত্রের ছিলেন তিনি। সাহাবি আয়াশ ইবনে আবি রাবিআ (রা.)-এর মা তিনি। মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেন আসমা।

ঐতিহাসিক ইবনে সাআদ লেখেন, আসমা বিনতে মুখাররাবা তামিমিয়া (রা.)-কে প্রথম হিশাম ইবনে মুগিরা বিয়ে করেন। তার ঔরশে আবু জাহাল ও হারেস জন্মগ্রহণ করে। হিশাম মারা গেলে তার ভাই আবু রাবিআ বিন মুগিরা তাকে বিয়ে করেন এবং তার ঔরশে আয়াশ (রা.), আবদুল্লাহ (রা.) ও উম্মে হুজাইর জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি মুসলিম হন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর হাতে আনুগত্যের বাইআত গ্রহণ করেন এবং মদিনায় হিজরত করেন।
হিজরতের পরও আসমা বিনতে মুখাররাবা (রা.) মদিনায় আতর ব্যবসা অব্যাহত রাখেন। রুবাইয়ি বিনতে মুয়াওবিজ বিন আফরা (রা.) বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে আমি একজন আনসারি নারীর (মদিনায় অবস্থানকারী অর্থে) কাছে গেলাম। তিনি ছিলেন আবু জাহালের মা আসমা বিনতে মুখাররাবা (রা.)।

তার ছেলে আবদুল্লাহ বিন আবি রাবিআ (রা.) ইয়েমেন থেকে তার কাছে আতর পাঠাতেন এবং তিনি তা ধনী ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করতেন। আমরাও তার কাছ থেকে কিনতাম। তিনি আমার জন্য নির্ধারিত কাচের বোতলে আতর ভরলেন এবং পরিমাপ করলেন।

এরপর বললেন, তোমার কাছে আমার পাওনা লিখে রাখো। আমি বললাম, লিখুন রুবাইয়ি বিনতে মুয়াওবিজ (রা.)-এর কাছে পাওনা রইল।

আসমা (রা.) তখন বললেন, দাঁড়াও! তুমি কি গোত্রের নেতাকে হত্যাকারীর মেয়ে? আমি বললাম, না, বরং গোত্রের দাসকে হত্যাকারীর মেয়ে। আসমা (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমার কাছে কোনো কিছু বিক্রি করব না এবং আমি বললাম, আমিও আপনার কাছ থেকে কিছু কিনব না।

ঐতিহাসিকরা লেখেন, আসমা বিনতে মুখাররাবা (রা.)-এর এই প্রতিক্রিয়া ছিল মা হিসেবে তার মানবিক দুর্বলতার প্রকাশ। কেননা মুয়াওবিজ (রা.) ছিলেন তার সন্তান আবু জাহালের হত্যাকারী। এই ব্যথা অনুচিত হলেও আশা করা যায়, মা হিসেবে তার এই দুর্বলতাকে দয়ালু আল্লাহ ক্ষমা করবেন।

ইসলাম গ্রহণের পর আসমা বিনতে মুখাররাবা (রা.) নবীজি (সা.)-এর সান্নিধ্য ও দোয়াকে নিজের জন্য সৌভাগ্য মনে করতেন। আবদুল্লাহ বিন আয়াশ (রা.) থেকে বর্ণিত, আবি রাবিআ গোত্রের কয়েকটি ঘরে নবীজি (সা.) গমন করেন। তিনি রোগীর খোঁজখবর নিতে এসেছিলেন। তখন আসমা তামিমিয়া (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে উপদেশ দিন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তেমনটিই আচরণ করবে, তোমার প্রতি তার যেমন আচরণ তুমি পছন্দ করো। তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তেমন আন্তরিক হও, যেমন আন্তরিকতা তার কাছ থেকে আশা করো। ’

খলিফা ওমর (রা.)-এর যুগে ইন্তেকাল করেন এ আতর ব্যবসায়ী সাহাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *