চট্টগ্রামপার্বত্য চট্টগ্রাম

মদের টাকার জন্য সন্তান বিক্রি করল বাবা

মদ্যপানের টাকা দিতে শিশু সন্তানকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে বাবা। শিশুটির বয়স আড়াই বছর। ছেলেকে ফিরে পেতে জনৈক ক্রেতার কাছে বারবার গেলেও টাকা ফেরত দিতে না পারায় সন্তানকে ঘরে আনতে পারেনি অসহায় মা উসাংচিং মারমা (৩০)।

বান্দরবানের রুমা সদর ইউনিয়নে সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে শিশুটি রোয়াংছড়ি উপজেলার লাইমী পাড়ায় জনৈক ক্রেতার কাছে রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন-চার বছর আগে রুমা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রুমাচড় পাড়ার বাসিন্দা ক্যহ্লাচিং এর ছেলে চাইসিংনু মারমা (৪০) ও পাইন্দূ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পড়ুয়া পাড়ার বাসিন্দা ক্যইমংউ মারমার বড় মেয়ে উসাংচিং মারমার মধ্যে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে এক মেয়ে। তবে স্বামী মদপান করে প্রায় সময় স্ত্রীকে মারধর করত। ছয় মাস আগে পরিবার ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যায় স্বামী। পরে ঘরে ফিরে এসে প্রায় ১৫ দিন আগে মাতাল অবস্থায় স্ত্রীকে বেধড়ক পিটিয়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়। ওই সময় আড়াই বছরের শিশু ছেলে নিজের কাছে রেখে দেয় মাতাল চাইসিংনু।

শিশুটির মা উসাংচিং মারমা বলেন, পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়ার পর থেকে রুমা সদর ইউনিয়নের পলিপাড়ার পার্শ্ববর্তী মায়ের খামার ঘরে মেয়ে সন্তানকে নিয়ে অবস্থান করেন।

শিশুটির মা উসাংচিং মারমার ভাষ্যমতে, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারে যে ২২ জুন তার শিশু ছেলেকে তার বাবা বিক্রি করে দিয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, তার শিশু সন্তানটি বান্দরবান সদর উপজেলার লাইমি পাড়ার এক মারমা পরিবারের কাছে আছে। এ লাইমি পাড়াটি বান্দরবান সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে।

মঙ্গলবার সকালে সেখানে গিয়ে তার ছেলে সন্তানকে দেখতে পায় এবং ছেলেও মাকে দেখে দৌঁড়ে আসে। কিন্তু বিক্রির সময় বাবার নেয়া তিন হাজার টাকা ফেরত দিতে না পারা এবং বিক্রেতা (শিশুটির বাবা) না থাকায় নিজ ঘরে নিয়ে যেতে পারেনি এই অসহায় মা।

এক প্রশ্নের জবাবে মা উসাংচিং বলেন, মদ্যপানের জন্য তার সন্তানকে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে স্বামী। একথা বলে তার চোখে জল ধরে রাখতে পারেনি। বলেন, ছেলে কীভাবে আমার কোলে আসবে, বুঝতে পারছি না।

ঘটনা জানাজানির পর শিশুটির বাবা চাইসিংনু মারমা অজ্ঞাত স্থানে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। যোগাযোগ করা হলে শিশুটির ক্রেতা জনৈক ব্যক্তি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

রুমা সদর ইউপি চেয়ারম্যান অংসিংনু মারমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে পরামর্শ করে ছেলেটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফেরত দেয়ার কাজ করছেন বলে জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, শিশুটির মায়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *