দেশজুড়ে

‘মাথা ন্যাড়া’ করে দেশ থেকে পালিয়েছেন মতিউর!

ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসার পর থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। তার বিভিন্ন বাসভবনে খোঁজ নিয়েও সন্ধান মেলেনি।

এমনকি কোরবানির ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও তিনি আর অফিসে আসেননি। এ সময়ে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি দেশ ছাড়ার সব প্রস্তুতি সেরেছেন।

রোববার (২৩ জুন) বিকেলের দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মতিউর পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা। এর আগে রোববার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে। একইদিনে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত (ওএসডি) করা হয়েছে। হারিয়েছেন তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদও।

সব হারানোর পেছনে রয়েছে ‘ছাগলকাণ্ড’। ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকার ‘ছাগল কেনা’ ইস্যুতে তোপের মুখে পড়েন মতিউর। ইফাতের ছাগল কেনার বিষয়টি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরই তা ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়।

শুধু তাই নয়, বেরিয়ে আসে এ কর্মকর্তা ও তার পরিবারের অঢেল সম্পদের চিত্র। মতিউরের ঘনিষ্ঠ কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর মতিউর রহমান ভারত থেকে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে।

জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অল্প সময়ে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় তিনি আতঙ্কে ছিলেন।

কারণ তার চেহারা সবার পরিচিত। তবে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের পরামর্শে তিনি মাথা ন্যাড়া করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। মূলত সবার কাছ থেকে চেহারা আড়াল করতে এ কৌশলের আশ্রয় নেন তিনি।

এর আগে ধানমন্ডি, কাকরাইল, গুলশানসহ মতিউরের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের ঠিকানায় বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর তাকে অফিস করতেও দেখা যায়নি। মূলত এরপর থেকেই দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘মতিউর এখন কোথায়?’

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ছাগলকাণ্ডের পর ছেলেকে অস্বীকার করে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন তিনি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগও ছিল সীমিত। সেই সময়ে অস্বীকার করা ছেলেকে নিরাপদে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স বিভাগে পড়াশোনা করা মতিউর রহমান অনেক কোম্পানির ছায়া পরিচালক। একাধিক ছোট কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনার মাধ্যমে বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। শেয়ারবাজার কারসাজিতে জড়িতদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের টিম গঠন
মতিউরের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এজন্য সংস্থাটির উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিমও গঠন করা হয়েছে। রোববার দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ গত ৪ জুন কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

এর আগেও গত দুই যুগে চারবার মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ পৃথকভাবে অনুসন্ধান করেছে দুদক। প্রতিবারই তিনি দুদক থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি দুদক। এ প্রসঙ্গে দুদক সচিব বলেন, চারটি পুরোনো অভিযোগে অনুসন্ধান হয়েছিল। তবে এখন নতুন করে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা পুরোনো কী কী অভিযোগে তিনি রেহাই পেয়েছিলেন—সেসব বিষয়ও খতিয়ে দেখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *