চট্টগ্রামরাঙ্গুনিয়া

‘মাদককারবারে’ কোটিপতি রাঙ্গুনিয়ার আমজু

কাগজে-কলমে তিনি ব্যবসায়ী। একটি ফার্নিচার দোকান ও একটি অটো রাইস মিলের মালিক তিনি। পাশাপাশি মৎস্য চাষও করেন। সব কিছু থেকে কয়েক বছরেই ব্যবসার লাভে হয়ে যান কোটিপতি। অথচ বাস্তবে সব কিছুই অস্তিত্বহীন। তিনি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. আমির হামজা। যাকে সবাই চেনেন আমজু নামে। যিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিও।

আমির হামজার কোটিপতি হওয়ার এমন কাহিনী ওঠে আসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে। বাস্তবে ব্যবসায়ী হলেও দালিলিক কোন ব্যবসায়ী নন তিনি। দুদক জানায়- মাদককারবারের সাথে জড়িত হয়ে অবৈধ উপায়ে এসব সম্পদ গড়েন রাঙ্গুনিয়ার আমজু।

যদিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি তার। দুদকের মামলা দায়েরের পর এবার তার অর্জিত এসব অবৈধ সম্পদ ক্রোক (জব্দ) করতে মাঠে নেমেছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে আদালতের আদেশ পাওয়ার পর আমির হামজা ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের নামে থাকা দেড় কোটি টাকারও বেশি সম্পদ জব্দে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুদক।

খবর নিয়ে জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত চট্টগ্রামের বেশকিছু মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক। এদের মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার আমির হামজা ওরফে আমজুর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সত্যতা পায় সংস্থাটি। পরবর্তীতে দুদকের কাছে সম্পদ বিবরণী জমা দেয় আমির হামজা। অনুসন্ধান শেষে ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর আমির হামজার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৫৮৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২০ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮২ টাকার অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে মামলা করে দুদক।

দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এরপর মামলাটি তদন্তের কাজ শুরু করেন দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী।

দুদক সূত্রে জানা যায়, মামলা দায়েরের পর অবৈধভাবে অর্জিত আমির হামজার এসব সম্পদ বিক্রির তোড়জোড় শুরু হয়। বিষয়টি টের পেয়ে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান চৌধুরী অবৈধভাবে অর্জিত স্থাবর সম্পদ ক্রোকের উদ্যোগ নেন। গত জুনে এসব সম্পদ ক্রোকের জন্য আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত আসামির অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) এডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, ‘দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত আসামির অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাতআয় বহির্ভূত স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেন। ইতোমধ্যে আলোচ্য স্থাবর সম্পদ ক্রোকের ব্যবস্থা করতে জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।’

ক্রোক হওয়া সম্পদ :

ক্রোক হওয়া সম্পদের মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার থানাধীন চন্দ্রঘোনায় আমির হামজার বসবাস করা দুই তলা বিশিষ্ট বাড়ি। যা ২০১৪ সালে ১৫ লাখ টাকায় ৬ শতক জমি ক্রয় করে পরবর্তীতে দৌতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেন তিনি। ভবন নির্মাণসহ বাড়ির মূল্য ধরা হয় ৭৬ লাখ ৯৬ হাজার ১৩১ টাকা। যার সবগুলো অর্থ অবৈধ ছিল বলে দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে আসে। এছাড়াও ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের ০৩ শতক পুকুর, ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৬ শতক নাল জমিও ক্রোক করা হয়। যা আমির হামজার নামে ক্রয় করা। এরবাইরে আমির হামজার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের নামে ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় ৬ শতক নাল জমি, ৩৬ লাখ টাকা মূল্যের ৫.৫৮ শতক পতিত ভূমিও ক্রোক করা হয়। সবমিলিয়ে আমির হামজা ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের নামে থাকা ১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার ১৩১ টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়।

অস্তিত্বহীন ব্যবসায়ী : দুদকের কাছে আমির হামজা মেসার্স বিসমিল্লাহ এন্ড আবিদ ফার্নিচার ও মেসার্স বিসমিল্লাহ অটো রাইস মিল নামের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে এসব সম্পদ অর্জনের তথ্য দেয়। কিন্তু আয়ের স্বপক্ষে বৈধ কোনো তথ্য বা রেকর্ডপত্র প্রদর্শন করতে পারেননি। এছাড়া পুকুর লিজ নিয়ে মৎস্য চাষ করার কথা দাবি করা হলেও এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি উপস্থাপন করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগে উৎস দেখাতে পারেননি তিনি।

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের স্বপক্ষে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য কোনো রেকর্ডভিত্তিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি নিজেও কোনো তথ্য প্রমাণ সরবরাহ করতে পারেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *