অন্যান্য

মাদক পাচাররোধে গুচ্ছ পরিকল্পনা

মাদকাসক্ত বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। এবাবে চলতে থাকলে ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তা বাধাগ্রস্ত হবে এমনটি ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় মাদক প্রতিরোধে সকল আইনশৃঙ্খলা সংস্থা, জনপ্রতিনিধি সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। সমন্বিত এ খসড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আহ্বানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় মাদকের ব্যবহার বন্ধে সমন্বিতভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে মাদক নির্মূলে সমন্বিত তিনটি খসড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তা হলো-মাদকের চাহিদা, সরবরাহ এবং মাদকের ক্ষতি হ্রাস।

ছয়টি সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তা হলো, সীমান্ত পথে সকল প্রকার মাদকদ্রব্যের অবৈধ প্রবেশ ও পাচার বন্ধ করা, দেশে মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচাররোধে আইনি কার্যক্রম জোরদার করা, সমাজের সকল স্তরে মাদকবিরোধী গণসচেতনতা সৃষ্টি করে মাদকদ্রব্যের চোরাচালান ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার আওতায় আনা। মাদকদ্রব্যের চাহিদা, সরবরাহ ও ক্ষতি হ্রাস সংক্রান্ত কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসন, বিচার বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ সম্পর্কিত সকলের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করা ও মাদকদ্রব্যের চাহিদা, সরবরাহ ও ক্ষতি হ্রাসের সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে মাদকামুক্ত দেশগড়া।

মাদকের চাহিদা হ্রাস: মাদকের চাহিদা কমাতে যেসব পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তা হলো, প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক অধিদপ্তর, বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিজিক্যাল কর্মপরিকল্পনা, মাদকবিরোধী প্রচারণা।

সরবরাহ হ্রাস : মাদকের সরবরাহ হ্রাসে নেওয়া পলিকল্পনা হল, মাদকের স্পট চিহ্নিত করা, স্থল, জল ও আকাশ পথে মাদক চোরাচালানের রুট চিহ্নিত করা, সীমান্ত এলাকায় মাদকের রুট চিহ্নিত করা, মাদক পাচারে সহায়তাকারি ব্যক্তি ও অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি। নিজস্ব সোর্স, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, মাদক সংক্রান্ত মামলার তথ্য, মাদক নিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের দেয়া তথ্য, এলাকার লোকজনের দেয়া তথ্য,গণমাধ্যম, আন্তর্জাতিক সংস্থার (যেমন- জাতি সংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্তণ অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড) প্রতিবেদন অথবা দ্বিপাক্ষিক চুক্তিবদ্ধ দেশ ইত্যাদি মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

ক্ষতি হ্রাস : মাদকের ক্ষতি হ্রাসে যেসব পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তা হল, কমিউনিটি পর্যায় যেমন, কমিউনিটি ক্লিনিক, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাইমারি পর্যায় যেমন- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আরবান হেলথ কেয়ার সেন্টার, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, সেকেন্ডারি পর্যায় যেমন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, টারশিয়ারী (তৃতীয় পর্যায়) পর্যায়ে কেন্দ্রিয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সেকেন্ডারি পর্যাযে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ, জেলা সদর হাসপাতাল ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। কমিউনিটি পর্যায়ে মাদক ব্যবহার চিহ্নিত করে মৃদু, মাঝারি, গুরুতর মূল্যায়ন সাপেক্ষে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা, রিল্যাপস প্রতিরোধ ও পুনর্বাসন এ চারটি ধাপে কাজ করতে এসব প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানো পরিকল্পনা রয়েছে।

নজরদারিতে ৩২ জেলা: মাদকপাচার ঠেকাতে সীমান্তবর্তী দেশের ৩২ জেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তা হলো, চট্টগ্রাম, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, বান্দরবান, সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *