আন্তর্জাতিকজাতীয়

মালয়েশিয়াতে দুই লাখ টাকায় বাংলাদেশি শ্রমিক বিক্রি

ঢাকা থেকে আট মাস আগে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন মান্নান মিয়া (ছদ্ম নাম)। তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে একই কোম্পানির অধীনে দেশটিতে যান আরও ৩৫ জন। যাওয়ার আগে রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছিল। যেখানে বেতন এবং চাকরিদাতা কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর সেই চুক্তি আর কার্যকর হয়নি। বরং মান্নান মিয়ার দাবি, মাথাপিছু প্রায় দুই লাখ টাকা দরে তাদের প্রত্যেককে বিক্রি করে দেওয়া হয় ভিন্ন এক কোম্পানির কাছে। যেখানে কাজ দেওয়া হয় প্রতিশ্রুত বেতনের অর্ধেকেরও কমে।

মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে করা বিবিসির একটি প্রতিবেদনে শ্রমিকদের বিক্রির বিষয়টি এভাবে উঠে এসেছে।

মান্নান মিয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমাদের বেতন ছিল বাংলাদেশি টাকায় ২৫ হাজার টাকা। অথচ বেতন হওয়ার কথা পঞ্চাশ হাজারের বেশি। তিন মাসের মাথায় আমরা কোম্পানির সুপারভাইজারকে বললাম যে, আমাদের ওভারটাইম দেন। তো বেতন-ভাতার কথা তুলতেই সুপারভাইজার রড নিয়ে এসে বেধড়ক মারধর করছে আমাদের সবাইকে। প্রচুর মেরেছে। পরে বলেছে যে, মারধরের কথা বাইরে কেউ জানলে মেরে ফেলবে, দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে ইত্যাদি।

মান্নান মিয়াসহ ৭ জন পরে সেই কোম্পানি থেকে পালিয়ে ভিন্ন একটা কোম্পানিতে কাজ নেন। কিন্তু তাদের হাতে এখন কোনো কাজের বৈধ অনুমতিপত্র নেই। ফলে তারা দিন কাটাচ্ছেন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের আতঙ্ক নিয়ে।

মালয়েশিয়াতে থাকা একজন বাংলাদেশি শ্রমিক কথা বলেছেন বিবিসির সঙ্গে। তিনি বলেন, আসলে এখানে কাজ নেই। কিন্তু সবাই শ্রমিক আনছে। যারা শ্রমিক নিয়ে আসার অনুমোদন পেয়েছে, বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার কোম্পানি, এদের কাছে এটা ব্যবসা। যে ৫০ জনের চাকরি দিতে পারবে সে আনছে সাতশত শ্রমিক। এটা কীভাবে সম্ভব? কীভাবে তারা অনুমোদন পাচ্ছে? কেন যাচাই হচ্ছে না তাদের সক্ষমতা? আসলে এখানে আমরা সবাই জিম্মি।

তিনি নিজেই চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোম্পানিতে চাকরি পাননি। তাকে কাজ দেওয়া হয়েছে অন্য কোম্পানিতে। কিন্তু মালয়েশিয়ার আইনে এটি বৈধ না। ফলে তিনি এখন অবৈধ অবস্থাতেই একরকম ‘জিম্মি দশায়’ আছেন।

তিনি আরও বলেন, এখানে আসতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা। এখন যেখানে আছি, সেখানে থাকলে টাকা জমানো তো দূরের কথা, পরিবারের খরচ দিয়ে বেঁচে থাকাই সম্ভব না। বাধ্য হয়েই এখান থেকে পালানো ছাড়া উপায় নেই। আর না পালালে শেষ উপায় হচ্ছে দেশে চলে যাওয়া। কিন্তু সেটাও সম্ভব না। কারণ দেশে গিয়ে ঋণের বোঝা কে টানবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *